মেলা
রাধা চক্করের মেলা
বাংলাদেশের প্রাচীন এবং বিচিত্র কয়েকটি মেলার মধ্যে রাধা চক্করের মেলা অন্যতম। মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের উভাজানি গ্রামে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০ বছরের পুরোনো এ মেলা প্রতিবছর বৈশাখ মাসের প্রথম বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কথিত আছে, বৈশাখ মাসে আউশ-আমন ধানের চাষ দেওয়ার জন্য মাটি যেন উর্বর থাকে, সে জন্য বৃষ্টির প্রার্থনা করা হতো। তাই বৃষ্টি প্রার্থনাস্বরূপ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাধা-গোবিন্দ বিগ্রহ স্থাপন করে পূজা করতেন। সেইসঙ্গে চলতে থাকে হরি উৎসবও। এই হরি উৎসব আর পূজাকে কেন্দ্র করেই মূলত এই রাধা চক্করের মেলার উদ্ভব।
পরে এই রাধা চক্করের মেলা স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে পরিচিতি লাভ করে। উভাজানি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ মেলার মূল আয়োজক। পূজা-অর্চনার পাশাপাশি মেলায় বিনোদনের প্রধান আকর্ষণ হলো নাগরদোলা। কেননা, এই নাগরদোলাকে রাধা চক্কর বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মেলার আরেকটি বিশেষ অংশ হলো সার্কাস খেলা। সার্কাস দলগুলোর দুর্দান্ত আর বিপজ্জনক সব কসরত অভিভূত করে মেলায় উপস্থিত দর্শকদের। তাই শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণ সব বয়সের মানুষের ভিড় জমে থাকে মেলায়। মেলার প্রধান আকর্ষণ নাগরদোলা ও সার্কাস হলেও স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা হরেক রকমের মিষ্টান্ন-আমের্তি, জিলাপি, চমচম, রসগোল্লা, রাজভোগ, কালোজাম, দই, ঘি, দানাদার, সন্দেশ ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়। এ ছাড়া মহিলা ও শিশুদের নানা রকমের আকর্ষণীয়, প্রসাধনী, বিলাসি রঙের পোশাক-পণ্য ইত্যাদির সমারোহ ঘটে থাকে এ মেলায়। আরো রয়েছে তুলা, তামা, কাঁসা, মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমের তৈজসপত্র, বিশেষ করে শিশুদের খেলনার জন্য মাটির তৈরি দুলদুল, ঘোড়া, টমটম। সেইসঙ্গে গ্রামীণ কারুশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ মেলার আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে।