আট বছরেই এসএসসি পাস করেন ডা. সাবরীনা!
করোনার সময় দুর্নীতির অভিযোগে আলোচিত ও কারাবন্দি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক সাবরিনা শারমিন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নাকি আট বছরেই এসএসসি পাস করেছেন। এনআইডি জালিয়াতির মামলায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্প্রতি ডিবি পুলিশ যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে, তাতে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
এদিকে, এনআইডি জালিয়াতির মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ১৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। সম্প্রতি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদ এই দিন ধার্য করেন। এ ছাড়া বিচারক আগামী ১৭ এপ্রিল কারাগারে থাকা ডা. সাবরীনাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্প্রতি ডিবি পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক(এসআই) মো. রিপন উদ্দিন। অভিযোগপত্রে দেখা গেছে, সাবরীনার প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) জন্ম তারিখ দেওয়া হয় ১৯৭৬ সাল। দ্বিতীয় এনআইডিতে জন্ম তারিখ দেওয়া হয় ১৯৮৩ সাল। অথচ তিনি ১৯৯১ সালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০০ সালে স্যার সলিমুল্লাহ (মিটফোর্ড) মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮৩ সালে জন্ম তারিখ ধরলে তিনি মাত্র আট বছর বয়সে এসএসসি ও ১৭ বছরে এমবিবিএস পাস করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ডা. সাবরিনা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রথম এনআইডির তথ্য গোপন করে দ্বিতীয় এনআইডি তৈরি করেছেন, যা আইনগত অপরাধ। অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ডা. সাবরিনার সঠিক জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৯৭৬ সালের ২ ডিসেম্বর । তিনি ২০১৬ সালে দ্বিতীয় এনআইডিতে ১৯৮৩ সালের ২ ডিসেম্বর জন্ম তারিখ সংক্রান্ত সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করেন, ডা. সাবরিনা শারমিনের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০-এর ১৪ ধারা অনুসারে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে বিকৃত ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও ১৫ ধারা অনুসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার অপরাধ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বয়স কমিয়ে জালিয়াতির উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় টিআইএন নম্বর প্রাপ্ত হয়েছে এবং প্রতারণামূলকভাবে দ্বিতীয় এনআইডি খাটি দলিল হিসেবে তার অফিসে এইচআরআইএস এ ব্যবহার করে পিআরএলের সময় বৃদ্ধি করায় পেনাল কোডের ৪৬৫/৪৬৮/৪৭১ ধারায় অপরাধ করেছে।
এর আগে, গত ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট সাবরিনার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় মামলাটি করেন গুলশান থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মমিন মিয়া।
এজাহার থেকে জানা গেছে, বর্তমানে সাবরিনার দুটি এনআইডি কার্ড সক্রিয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি টের পাওয়ার পর বিস্তারিত জানতে ইসির কাছে তথ্য চায়।
গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন জাল করোনা সনদ দেওয়ার মামলায় সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুলসহ ছয়জনকে ১১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাবরিনা।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিশেষ পিপি আজাদ রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেছেন, আগামী ১৭ এপ্রিল এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে সাবরীনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলে মামলার বিচার শুরু হবে। এরপরে মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হতে পারে।
পিপি আজাদ বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০-এর ১৪ ধারায় অপরাধ প্রমাণ হলে এর শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ১৫ ধারার শাস্তি হলো অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক বিশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া ৪৬৫ ধারার শাস্তি হলো, দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। ৪৬৮ ধারার শাস্তি হলো, সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানার দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।’