আদালতকাণ্ড নিয়ে আইনমন্ত্রী, ‘যা করার দরকার তাই করব’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনকে কেন্দ্র করে হাইকোর্টে আইনজীবীদের হট্টগোলের পরিপ্রেক্ষিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
সর্বোচ্চ আদালতে বিশৃঙ্খলার কিছুক্ষণ বাদেই আইনমন্ত্রী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে অপমান বা অবমাননা করতে সরকার দিবে না। কারণ দেশের জনগণকে নিরাপদে থাকতে দেওয়ার জন্য দেশের আইনশৃখলা পরিস্থিতি রক্ষা করা এবং বিশৃঙ্খলা বন্ধ করা আমাদের দ্বায়িত্ব। যারাই এরূপ আচরণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বাধ্য হবে।’
আনিসুল হক আরো যোগ করেন, ‘আদালতের সম্মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। আদালতের মর্যাদা রক্ষা করতে আমাদের যা করা দরকার তাই করব।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে আইনজীবীদের হট্টগোলের বিষয়েই আইনমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। প্রথমে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
আজ আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিতে তাঁর স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সেই প্রতিবেদন দাখিল করেনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আরো কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা বাকি আছে বলে আদালতকে জানায় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। পরে আপিল বিভাগ আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দিনই খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি করা হবে বলে আপিল বিভাগ আদেশ দেন। এর পরই আইনজীবীরা আদালতে হট্টগোল শুরু করেন।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের আপিল শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ সংক্রান্ত শুনানি হয়। নির্ধারিত স্বাস্থ্য প্রতিবেদন না আসায় ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের তুমুল বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করেন। পরে এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। আমরা আপিল বিভাগে এমন অবস্থা আগে কখনও দেখিনি।
এ ঘটনার পর বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের শুনানির সময় বিএনপির আইনজীবীরা যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিএনপির আইনজীবীরা আদালতকে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করেছেন। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’
আইন ও আদালতের ওপর বিএনপির বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ নেই। সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি তাদের কোনো আনুগত্য নেই। আদালতের মর্যাদা রক্ষা করতে যা করা দরকার তাই করা হবে বলেও মন্তব্য করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী।
গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। এরপর গত ১৪ নভেম্বর সাতটি গ্রাউন্ডে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। ১৭ নভেম্বর আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ২৫ নভেম্বর শুনানির পর বিচারক সেটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ের পর ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন খালেদা জিয়া।