ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া মাঠ
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এবার ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে এই মাঠ।
শোলাকিয়ায় ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ঈদ জামাত। সে হিসেবে এটি হবে ১৯৫তম জামাত। গত দুই বছর ঈদের জামাত না হওয়ায় মানুষের মনে ছিল বিস্তর আক্ষেপ। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে আবারও ঈদে লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে শোলাকিয়ার মাঠ।
উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদের জামাত আয়োজন উপলক্ষে এখন শোলাকিয়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তবে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। দিন-রাতের পরিশ্রমে নামাজের উপযোগী হয়ে উঠছে ঈদগাহ ময়দান। জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়।
শোলাকিয়া ঈদ জামাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। মাঠে একসঙ্গে তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করবেন বলে জানা গেছে। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেওয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা ও টয়লেট। এখন চলছে শোভাবর্ধনের কাজ।
মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিক্যাল টিম। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বারবার পরিদর্শন করছেন ঈদগাহ মাঠ। বসছেন দফায় দফায় বৈঠকে।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এবার কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে শুধু টুপি, মাস্ক ও জায়নামাজ ছাড়া কিছুই বহন করা যাবে না। মোবাইল ফোন ও ছাতাও বাড়িতে রেখে আসতে হবে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ২০১৬ সালে শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রত্যেক মুসল্লি বেশ কয়েকবার হবেন তল্লাশির মুখোমুখি। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো মাঠ ও আশপাশ। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
এ ছাড়া মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের ড্রোন ক্যামেরা। শোলাকিয়া ঈদগাহ মসজিদের ইমাম আব্দুস সালাম গোলাপ জানান, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হজরত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জে জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর এ ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর শোলাকিয়া মাঠে অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠ। মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রায় সাত একর আয়তনের মাঠটিতে ২৬৫টি সারি রয়েছে। এ ছাড়া পাশের রাস্তা এবং আশপাশের ফাঁকা স্থানে দাঁড়িয়েও মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন।