গভীর রাতেও লোডশেডিং, চুরি-ডাকাতির শঙ্কায় মোংলা পৌরবাসী
সন্ধ্যা নামতেই অলিগলিতে নেমে আসে অন্ধকার। লোডশেডিং আর দোকানপাট বন্ধ থাকায় এ সময় নিস্তব্ধ হয়ে যায় রাস্তাঘাট। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে গা ছমছম অবস্থা। ছিনতাই ও ডাকাতির ভয়ে অনেকটা দ্রুত পা চালিয়ে ঘরে ফেরার তাড়া তখন বাগেরহাটের মোংলা পৌরবাসীর। শুধু সন্ধ্যা কিংবা রাতে নয়, গভীর রাতেও চলছে লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন পৌর এলাকার মানুষ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, বর্তমানে মোংলায় ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎতের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ রয়েছে ৩০ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি থাকছে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এমন পরিস্থিতিতে দিনে ও রাতে লোডশেডিং বেড়েই চলেছে।
গতকাল সোমবার দিনগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর টানা এক ঘণ্টা পর আসে। এর আগের রাতেও এভাবেই চলেছে কয়েকবার লোডশেডিং। দিনে ও রাতে বিদ্যুৎ-বিপণন বিভাগের ঘোষণা বহির্ভূত লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে বন্দর ও পৌর শহরের বাসিন্দারা। অন্ধকারে তাদের পাশাপাশি শহরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নাইট গার্ডদের মধ্যে চুরি-ছিনতাইয়ের আতংক দেখা দিয়েছে।
পৌর শহরের শেখ আব্দুল হাই সড়কের দোকানি রুহুল আমিন ও মজিবর গাজী জানান, রাতে দোকানপাট বন্ধ থাকে। ফলে, রাস্তায় মানুষ চলাচলও এখন অনেক কম। এরই মধ্যে লোডশেডিং হলে অন্ধকারে দোকানপাট চুরির ভয় থাকে।’
পৌর শহরের নাইট গার্ড মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘অন্ধকারে সব দোকান তো আর দেখে রাখা যায় না। চুরি ডাকাতির আতংকে রাত কাটে।’
পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোহর আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাত ১২টার পর শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে নামি। এমন সময় লোডশেডিং হলে কিছু দেখা যায় না। ফলে ময়লা পরিষ্কার করতে কষ্ট হয়।’
অটোরিকশাচালক কালাম হোসেন বলেন, ‘রাতের লোডশেডিংয়ে সড়কের বাতিও বন্ধ হয়ে যায়। এই গাড়ির আলোতে অনেক কিছুই তখন অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে অনেকটা ভয়ে ভয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।’
শহরের বান্ধাঘাটার এলাকার মো. রাসেল ও কলেজ মোড়ের আব্দুল হালিম বলেন, ‘দিনে কাজকর্ম করে বাড়িতে এসে খেয়ে শুতে গেলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এদিকে, এখন গরমকাল। এই গরমে বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘরে থাকা দায়। অন্যদিকে, অন্ধকারে বাইরে একটু যে হাঁটাহাঁটি করব, তারও উপায় নেই। ছিনতাই-ডাকাতির আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে কষ্টেই আছি।’
লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কা প্রসঙ্গে মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে রাতে পৌর শহরে পুলিশের একটি টহল টিম ছিল, লোডশেডিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আরও একটি টিম বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত রাতে শহরের উত্তর ও দক্ষিণে দুইটি টহল টিম ডিউটিতে থাকবে।’
পিডিবি'র মোংলার আবাসিক প্রকৌশলী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘মোংলায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎতের ঘাটতি রয়েছে ১৫ মেগাওয়াট। তাই প্রতিদিন দুই ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও অন্যান্য জায়গার তুলনায় মোংলায় লোডশেডিং কম হচ্ছে।’