ঝুপড়িতেই দিন কাটে বৃদ্ধ বারেশ-কমলা দম্পতির
মরমী বাউল সাধক উকিল মুনসীর জৈনপুর গ্রামে বসবাস বারেশ-কমলা দম্পতির। পল্লী কবি জসীম উদদীনের আসমানীকেও যেন হার মানিয়েছে তাদের ঘরটি। বাড়ি তো নয়, যেন পলিথিনে মোড়ানো পাখির বাসা। সামান্য বাতাসেই ঘর নড়বড় করে। তারই মধ্যেই দুই সন্তান নিয়ে থাকেন বারেশ-কমলা দম্পতি।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জৈনপুর গ্রামের মৃত সুরেশ বনিকের ছেলে বারেশ বনিক। নিজের স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পত্তি নেই। স্ত্রী কমলা রানী বনিক ও সন্তানদের নিয়ে অন্যের জায়গায় পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকেন তিনি। সামান্য বাতাসেই ঘর নড়বড় করে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায় তাদের বিছানা। দুই থেকে চার বছর পরপর এক মালিকের জায়গা ছেড়ে অন্য মালিকের জায়গায় বাঁধতে হয় ঘর।
বারেশ বনিক ও কমলা রানী বনিক দম্পতির পাঁচ সন্তান। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা বসবাস করেন। জীবনের সঙ্গে লড়াই করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে চলছে তাঁর জীবনযুদ্ধ। বর্তমানে থাকছেন শংকর তালুকদারের নামের একজন ব্যক্তির আশ্রয়ে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এই দম্পতির নিজেদের কোনো জমি নেই। নেই নিরাপদে বসবাস করার কোনো ঘরও। জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। বারেশ বনিক ও কমলা রানীর বয়স যথাক্রমে ৭৫ ও ৭০ বছর। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের বয়স কম হওয়ায় সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত।
কমলা রানী বনিক জানান, স্বামী বারেশ বনিক অন্যের বাড়িতে কাজকর্ম করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন বয়সের ভারে কাজকর্ম করতে পারেন না। জীবিকার তাগিদে ছোট ছেলেটি অন্যের বাড়িতে কৃষি কাজ করে। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বেতের পাটি বানিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। এভাবেই চলে দুবেলা দুমুঠো খাবার।
কমলা রানী বনিক আরও জানান, পাটি বানিয়ে তেমন লাভ হয় না। একটি পাটিতে প্রায় ২৫০ টাকার মুক্তা দরকার হয়। প্রতিটি পাটি বানাতে প্রায় তিন দিন সময় লাগে। বাজারে প্রতিটি পাটি বিক্রি হয় ৪০০ টাকায়। পাটি বিক্রির টাকা থেকে ১৫০ টাকার চাল, ডাল, লবণ, মরিচ কিনতে হয়। বাকি ২৫০ টাকার মুক্তা কিনতে হয় ফের একটি পাটি তৈরির জন্য।
কমলা রানী আক্ষেপ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে কত মানুষ ঘর পেল। অথচ আমার মতো অসহায়ের কপালে একটা ঘর জুটল না।’
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, ‘বারেশ-কমলা দম্পতির ব্যাপারে আমাকে কেউ জানায়নি। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে অবহিত হলাম। একটি আবেদন নিয়ে আমার কাছে এলে ঘরের ব্যবস্থা করে দেব।’