বজ্রপাতে ৯ জেলায় ১৬ জনের মৃত্যু
দেশের নয় জেলায় পৃথক পৃথক বজ্রপাতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার সময় হওয়া বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতে সিরাজগঞ্জে পাঁচজন, চট্টগ্রামে তিনজন, মানিকগঞ্জে দুজন, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, শরীয়তপুর ও বরিশালে একজন করে মারা যান।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ :
শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ : বজ্রপাতে সিরাজগঞ্জে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শাহজাদপুরে দুইজন, উল্লাপাড়ায় দুইজন ও বেলকুচিতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের চর আঙ্গারু গ্রামের আমানত হোসেনের ছেলে জুয়েল রানা (২৪), নরিনা ইউনিয়নের বাতিয়া গ্রামের ভোলা পন্ডিতের ছেলে আলহাজ পন্ডিত (৫০), উল্লাপাড়ার সলঙ্গা থানার আঙ্গারু গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪৫) ও উধুনিয়া ইউনিয়নের আগদিঘল গ্রামের শাহেদ আলীর ছেলে ফরিদুল ইসলাম এবং বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চর শমেসপুর গ্রামের ইউসুব আলীর স্ত্রী লাইলী খাতুন (৩৫)।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা বলেন, ‘বিকেলে ঝড়ের মধ্যে জমির ধান কাটছিলেন জুয়েল রানা ও আলহাজ পন্ডিত। এ সময় ঝড় বৃষ্টি শুরু হলে বজ্রপাতের তাঁদের মৃত্যু হয়।
সলঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উধুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, উল্লাপাড়ার ধরাইল বিলে হাঁসের বাথানে কাজ করছিলেন রফিকুল ইসলাম। প্রচণ্ড বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতে তাঁর মৃত্যু হয়। একই সময় ধান কেটে বাড়ি ফেরার পথে আগদিঘল কবরস্থানের সামনে বজ্রপাতে মারা যান ফরিদুল ইসলাম।
বেলকুচির ইউএনও অনিসুর রহমান বলেন, বিকেলে ঝড় বৃষ্টির সময় মাঠে গরু আনতে যান লাইলী বেগম। এ সময় বজ্রপাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
আরিচ আহমেদ শাহ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও মিরসরাই উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজ সকালে ফটিকছড়ির কাঞ্চননগরে বাড়ির পাশের কৃষিক্ষেতে কাজের সময় বজ্রপাতে লাকি দাশ (৩৮) ও ভানু শীল (৪০) নামের দুইজন অচেতন হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় আরও দুইজন আহত হন। আহতরা হলেন মালতী রানী দাশ ও শোভা রানী দে।
এদিকে মিরসরাইয়ের সাহেরখালীতে বাড়ির বাইরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে সাজ্জাদ হোসেন নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয় ওই স্কুলছাত্রের বাবা।
আহমেদ সাব্বির সোহেল, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলায় বজ্রপাতে এক কলেজছাত্রসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ আহমেদ বিপ্লব বলেন, সন্ধ্যায় উপজেলার বৈলত গ্রামে বজ্রপাতে শাহীন (১৮) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। শাহীন ঘিওর সদর ইউনিয়নের মুক্তার হোসেনের ছেলে। শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়ন সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন শাহীন।
অপর দিকে দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের চরভাঙা গ্রামের মহিষের গাড়িচালক গোলাম মোস্তফা (৪০) বাদামবোঝাই করে বাড়ি ফেরার পথে বজ্রপাতে মারা যান। তিনি চরভারাঙ্গা গ্রামের আব্দুল বাতেন মিয়ার ছেলে।
বাচামারা ইউনিয়ন পরিষেদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রমজান আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এম. আর. মুর্তজা, মাদারীপুর : মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় বজ্রপাতে আয়শা বেগম (৪৮) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের সামাদ খার কান্দি গ্রামের বালুরটেক এলাকার আয়শা তাঁর নিজ বাড়ি থেকে পাশের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে মারা যান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চরজানাজাত ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুল জলিল মিয়া জানান, নিহত ওই নারী বালুরটেক এলাকার ছোরফান হাওলাদারের স্ত্রী।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় বৃষ্টির মধ্যে মাঠে খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে অপূর্ব বর্মন (১৭) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। নিহত অপূর্ব বর্মন উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নের জেলে পাড়া গ্রামের স্বপন বর্মনের ছেলে। সে আলী আজগর অ্যান্ড আব্দুল্লাহ কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এ ঘটনায় অপু বর্মন (২১) ও পরিচয় বর্মন নামের আরও দুই যুবক আহত হয়েছেন। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শেখরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম ও শেখরনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. নাসির শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুপুরের দিকে বৃষ্টি হলে স্কুলমাঠে ফুটবল খেলছিলেন কিছু যুবক। এ সময় বজ্রপাতে ওই কলেজছাত্র মারা যায়।
এবিএম ফজলুর রহমান, পাবনা : পাবনায় আম কুড়াতে গিয়ে যুথি খাতুন (১৮) নামের এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাবনা সদরের মালঞ্চি ইউনিয়নের পাইকেল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুথি আটঘরিয়া দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন।
পাবনা সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন, বজ্রপাতে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আব্দুল আজিজ শিশির, শরীয়তপুর : শরীয়তপুরের জাজিরায় বজ্রপাতে আতিকুর রহমান মাদবর (১৪) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে জানান জাজিরা থানার ওসি মো. মাহবুবুর রহমান। নিহত আতিকুর রহমান মাদবর (১৪) জাজিরার সেনেরচর ইউনিয়নের ছোট কৃষ্ণনগর এলাকার ফারুক মাদবরের ছেলে।
জাজিরা থানার ওসি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছিল। আতিকুর বাড়ির পাশে নিচু জমিতে মাটি ভরাটের কাজ করছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে সে মারা যায়। নিহতের মরদেহ জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় রুইতনপুর গ্রামে বজ্রপাতে কোরবান আলী (৪০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আলমডাঙ্গা থানার ওসি আলমগীর কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কোরবান আলী আজ বিকেলে মাঠে পাটক্ষেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন কোরবান। আশেপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলেও পথে তিনি মারা যান।
আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল : বরিশালের উজিরপুরে নদী থেকে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজার মেশিনে কাজ করার সময় বজ্রপাতে নান্টু বালী (৩০) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন সুমন খান (২৬) নামের আরেক শ্রমিক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুমন হোসেন।
রোববার বিকেলের দিকে হঠাৎ ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হলে উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের সাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বজ্রপাতে নিহত নান্টু বালী ওই এলাকার ইউনুস বালীর ছেলে। আহত সুমন একই এলাকার পল্টু খানের ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার বিকেলে ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে কঁচা নদীতে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারে কাজ করছিলেন নান্টু ও সুমন। এ সময় বজ্রপাতে তারা দুজনেই গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নান্টু বালীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুমন খানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।