শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে তদন্তদল এমসি কলেজে এসে পৌঁছে। এ সময় তারা প্রায় এক ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও কলেজ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর হোস্টেলে যান তদন্ত কমিটির সদস্যরা। হোস্টেলের নবনির্মিত ভবনসহ বিভিন্ন হল পরিদর্শন করেন। এ সময় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন তারা।
তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহিদুল কবির চৌধুরী জানান, কমিটি তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক এবং এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
শাহিদুল কবির আরো জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলবেন কমিটির সদস্যরা। প্রয়োজনে ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা।
কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লোকমান হোসেন ও উপপরিচালক নুরে আলম।
স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এমসি কলেজে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পাঁচ-ছয়জন তাঁদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যান। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন তাঁরা। পরের দিন শনিবার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), তারেক (২৮), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান মাছুম (২৫)। তাঁদের মধ্যে সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে, তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আর মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলায়। অভিযোগ উঠেছে, মামলার এই ছয় আসামি ছাত্রলীগের কর্মী। যদিও মামলার এজাহারে সেই পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
এ ঘটনায় সবশেষ আজ মঙ্গলবার মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন ও আইনুলের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক এম সাইফুর রহমান পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদের মধ্যে রাজন ও আইনুল ছিলেন সন্দেহভাজন। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এ ছাড়া গতকাল সোমবার মধ্যরাতে মামলার ৬ নম্বর আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুমকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন মাসুম।
এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় সাত আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্কর ও ৫ নম্বর আসামি রবিউলকে গতকাল পাঁচ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
গত রোববার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা থেকে সাইফুর রহমান ও হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা এলাকা থেকে অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন রাতে এ মামলার আরো দুই আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি ও রবিউল ইসলামকে হবিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নবীগঞ্জ উপজেলার এক আত্মীয়র বাসা থেকে রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অপরদিকে একই দিন দিবাগত রাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার কচুয়া নয়াটিলা এলাকা থেকে রাজনকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তিনি এ মামলার অজ্ঞাতপরিচয় তিন আসামির একজন। রাজনকে আশ্রয় দেওয়া ও সহযোগিতা করায় আইনুলকে আটক করা হয়।