ডিসি হলেন কনেপক্ষ, বরপক্ষে এসপি
বিয়ের বয়স না হওয়ায় কাবিন ছাড়াই গোপনে বিয়ে। দুই বছর পর কনে প্রাপ্তবয়স্ক হলে কাবিনামানা দাবি করে কনেপক্ষ। তখন তাতে অস্বীকৃতি জানায় বরপক্ষ। অবশেষে পুলিশের নারী সহায়তা কেন্দ্র-জাগরণীতে মামলা করা হয়। সবশেষে পুলিশের উদ্যোগেই আবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হলো তাদের। ঘটনাটি বরগুনার।
বৃহস্পতিবার সকালে জাগরণীর উদ্যোগে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই বিয়েতে কনেপক্ষের হয়ে অতিথি হলেন বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা. বশিরুল আলম। আর বরপক্ষের অতিথি পুলিশ সুপার।
বর-কনের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহমেদ, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক চিত্তরঞ্জন শীল, খেলাঘর বরগুনার সাধারণ সম্পাদক মুশফিক আরিফ।
জাগরণীর সমন্বয়কারী উপপরিদর্শক (এসআই) জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, দুই বছর আগে সদর উপজেলার আয়লা পাতকাটা ইউনিয়নের সৈয়দ মুন্সির মেয়ে নাসরিন আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়িয়া গ্রামের মো. শাহজাহান বয়াতীর ছেলে আবুল কালামের। তখন কনে নাসরিনের বিয়ের বয়স না হলেও মৌলভী ডেকে গোপনে বিয়ে পড়ানো হয়। এ বিয়েতে কোনো কাজি কাবিন লিখতে রাজি না হওয়ায় বিয়ের নিবন্ধন হয়নি। পরে কনে নাসরিন আক্তারের বয়স ১৮ পূর্ণ হলে ছেলেপক্ষের কাছে কাবিন দাবি করে কনেপক্ষ। আর তখনই বাধে বিপত্তি। দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
এসআই জান্নাতুল ফেরদৌস আরো জানান, সেই বিরোধের জের ধরে একসময় নির্যাতনের শিকার হন কনে নাসরিন আক্তার। প্রায় সাত মাস ধরে নাসরিন আক্তারের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি বরপক্ষ। এ অবস্থায় নাসরিন আক্তার বরগুনা জেলা পুলিশ পরিচালিত জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনা হয়। আলাপ-আলোচনার পর এক পর্যায়ে দুই লাখ টাকা দেনমোহরে নাসরিনকে ঘরে তুলে নিতে রাজি হয় বরপক্ষ। এরপর জাগরণী নারী সহায়তা কেন্দ্রের উদ্যোগে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। সকালে নবদম্পতির সুখী-সমৃদ্ধ জীবন কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন কাজী সাইদুর রহমান।
আইনী সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র নারীদের সহায়তায় বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের উদ্যোগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চালু করা হয় নারী সহায়তা কেন্দ্র-জাগরণী। শুরু থেকে এ পর্যন্ত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ৬০ জন দরিদ্র নারী এ কেন্দ্রের শরাণাপন্ন হয়েছেন। এরই মধ্যে জাগরণীর পরামর্শ ও সহায়তা নিয়ে নিজেদের সংসারে ফিরে গেছেন ৩৭ জন নির্যাতিত নারী। তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ সংসারে স্বামী সংসার নিয়ে ভাল আছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।