চামড়ার ঝুট ব্যবসায়ী নুরু মিয়ার এখন কী হবে
কর্মজীবনের শুরু থেকেই চামড়াশিল্পে কাজ করেন। এখন বয়স প্রায় ৬০ বছর। ৪০ বছরের এই পেশা হঠাৎ করে পরিবর্তন করতে পারছেন না।
আজ সোমবার রাজধানীর ট্যানারিশিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত হাজারীবাগে এনটিভি অনলাইনকে এভাবেই বলছিলেন চামড়া ব্যবসায়ী মো. নুরু মিয়া।
ট্যানারিশিল্প হাজারীবাগ থেকে সাভারে নেওয়া জন্য কারখানার সব সেবামূলক সংযোগ গত শনিবার বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে সরকার। এতে করে ট্যানারি খ্যাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই পথে বসার উপক্রম। তাঁদের মতোই একজন এই নুরু মিয়া।
নুরু মিয়া বলেন, ‘জীবনের প্রায় পুরো সময়টা যে কাজে ছিলাম, হঠাৎ করে অন্য কাজ করতে হবে এ কথা ভাবতে পারছি না। এ বয়সে রিকশাও চালাতে পারব না। গ্রামে যাব সে টাকাও নেই, আমি চামড়া ছাড়া অন্য কোনো কাজ করেছি বলে মনে পড়ে না।’
ট্যানারিশিল্পের বাঁকানো ঝুট চামড়া সোজা করে বিক্রি করতেন নুরু মিয়া। তিনি জানান, ‘ট্যানারি কারখানা থেকে ঝুট চামড়া কিনে পরিষ্কার করি, পরে তা বিক্রি করি। এসব ঝুট চামড়া বিক্রি করে যে টাকা পেতাম তা দিয়েই বাসা ভাড়া ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চলত।’
চাঁদপুর থেকে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে ঢাকায় আসেন নুরু। এখন তাঁর পাঁচ সন্তান। ট্যানারিশিল্পে কাজ করে ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। তবে এই শিল্প সাভারে নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
নুরু মিয়া বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে এই পেশায় যুক্ত থাকায় অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই নতুন করে বৃদ্ধ বয়সে অন্য পেশায় যাওয়ার কথা ভাবতে পারছি না। কিন্তু জীবন চালাতে অন্য পেশায় যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’
হাজারীবাগ এলাকায় নুরু মিয়ার মতো এমন হাজার মানুষ রয়েছেন। যাদের জীবিকা চলছিল ট্যানারির ঝুট চামড়া দিয়ে। কিন্তু সেখান থেকে এই শিল্প সরিয়ে ফেলায় হাজারীবাগের শ্রমিকরা সাভার চামড়া শিল্পনগরী এলাকায় যেতে চান। সেটা না হলে তাঁরা সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চান।
নুরু মিয়া বলেন, ‘৪০ বছর থেকে এ পেশায়। আমাদের ব্যবসা হচ্ছে ট্যানারির কারখানার ঝুট। যদি কারখানাই এখানে না থাকে, তাহলে আমাদের কী হবে। আমার পরিবারকে কীভাবে চালাব।’
‘সরকার আমাদের যদি সাভারে এ ব্যবসা করার সুযোগ দিত, তাহলে আর কোনো সমস্যা হতো না। অথবা একটা এককালীন অর্থ বরাদ্দ দিত। আর এটা করতে পারলে আমরা পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে পারতাম।’