বিএনপির প্রতিনিধি সভায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে শহরের ডা. কে আহম্মেদ পৌর কমিউনিটি সেন্টারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে শৈলকুপা ছাত্রদলকর্মী শাহেদ আলীর অবস্থা গুরুতর। তাঁকে বিকেল ৪টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আহতরা হলেন শৈলকুপা ছাত্রদল কর্মী নেতা শাহেদ আলী, বিএনপি কর্মী আমজাদ হোসেন, সাহেব আলী, আফাঙ্গীর হোসেন, মহিদুল ইসলাম, আবদুল সাত্তার, রবিউল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মইনউদ্দিন। আহত অন্যদের নাম পাওয়া যায়নি।
যেভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে ডা. কে আহম্মেদ পৌর কমিউনিটি সেন্টারে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভা শুরু হয়। এতে সূচনা বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন। এ সময় সভাস্থলে প্রবেশের চেষ্টা করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। তাঁদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় শৈলকুপার বাসিন্দা ওই নেতার সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা মিছিল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে জেলা সভাপতির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৪ জন নেতাকর্মী আহত হন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, বাইরে থেকে আসাদ সমর্থকরা কমিউনিটি সেন্টারের কাচে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। উভয় পক্ষের সংঘর্ষে কমিউনিটি সেন্টারের সব কাচ ও জানালা ভেঙে যায়। কাচের টুকরা অনেকের শরীরে গিয়ে আঘাত করে। সভায় উপস্থিত নারী নেতাকর্মীরা চিৎকার করতে থাকেন। অনেকেই মাথায় চেয়ার দিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। সভাস্থলে থাকা অনেকেই আবার বাইরে ইট ছুড়তে থাকেন। এ ঘটনায় শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশের মকবুল প্লাজা ও পৌর মার্কেটের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভেতরেও সংঘর্ষ
অনুষ্ঠানের প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ সভার ভেতরে অবস্থান করছিলেন। বাইরের সংঘর্ষের জন্য আসাদকে দায়ী করেন জেলা সভাপতি মসিউর রহমানের সমর্থকরা। তাঁরা আসাদের ওপর চড়াও হন। অনেকেই আসাদকে লক্ষ করে চেয়ার ছুড়ে মারেন। চেয়ারটি মসিউর রহমানের মাথার ওপর দিয়ে মঞ্চে গিয়ে পড়ে। পরে উপস্থিত নেতাদের হস্তক্ষেপে ভেতরের পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আবার প্রতিনিধি সভা শুরু
সভাস্থলের বাইরে ও ভেতরে সংঘর্ষ থামে আধা ঘণ্টার মধ্যে। পরে আবার প্রতিনিধি সভা শুরু হয়। একপর্যায়ে জেলা বিএনপির নেতা আক্তার হোসেন মাইকে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি সংঘর্ষের জন্য আসাদুজ্জামানকে দায়ী করেন। পরে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, কণ্ঠশিল্পী মনির খান, সাবেক এমপি আবদুল ওহাব, সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান বেল্টু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুলসহ অন্য নেতাদের উপস্থিতিতে সভা চলতে থাকে।
পুলিশ পাহারায় সভা
বিএনপির প্রতিনিধি সভার শুরু থেকেই বাইরে পুলিশ অবস্থান করছিল। তবে সংঘর্ষ শুরুর পর সভাস্থলে যান ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানিজ হোসেন জাহান ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরেন্দ্র নাথ সরকারসহ অনেকেই। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলের চারিদিকে অবস্থান নেয়। পুলিশের ধাওয়ায় সভার বাইরে অবস্থান করা নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর বাইরের পরিস্থিতি শান্ত হলে ভেতরে আবার সভা শুরু হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত পুলিশ পাহারায় চলে বিএনপির ওই প্রতিনিধি সভা।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তিনিও ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতা মীর রবিউল ইসলাম লাভলুকে সভাস্থলে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।
ঝিনাইদহ যুবদলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাভলু জানান, তাঁকে প্রতিনিধি সভায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। দলীয় নেতাদের ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে বহিরাগতরা এই হামলা চালিয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল ওহাব বলেন, আসাদ ও লাভলু জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিনিধি সভায় হামলা চালিয়েছে। আসাদ স্থানীয় সরকার দলীয় সমর্থকদের ইন্ধনে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। প্রতিনিধি সভায় হামলার মধ্যে দিয়ে তাঁর সেই ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়েছে।