রায়ে অসন্তোষ বিশ্বজিতের মা-বাবার
শরীয়তপুর নড়িয়া সড়কের পাশে মশুরা গ্রাম। ওই গ্রামের ঘোষপাড়ায় বিশ্বজিৎ দাসের পরিবারের বসবাস। বসতঘরের পাশে উঠানের এক কোণে বিশ্বজিতের স্বজনরা তৈরি করেছে তার একটি প্রতিকৃতি। প্রতিকৃতিটি ঘিরেই তার মা কল্পনা রানি ও বাবা অনন্ত দাস বেঁচে আছেন। বিশ্বজিতের খেলার ব্যাট, ছবি, ব্যবহারের জিনিসের মধ্যেই খুঁজে ফেরেন তাঁর স্মৃতি।
আজ রোববার বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্বজিতের পরিবার।
রায় শোনার পর নিহত বিশ্বজিতের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা অনন্ত দাস, মা কল্পনা রানী দাস ও বোন রূপা দাস রায় শুনে বিশ্বজিতের শ্মশানের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রতিবেশীরা ছুটে এসেছেন তাদের সান্ত্বনা দিতে।
কাঁদতে কাঁদতে কল্পনা রানি দাস বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ আমার ছেলে আমাকে মা বলে ডাকে না। মা হিসেবে এটা যে কত বেদনাদায়ক তা কী কেউ বোঝে না? ওর মৃত্যুর পরের বছর আটজনের মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা হলো। আসায় বুক বেঁধে ছিলাম অপরাধীদের শাস্তি বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু এখন কি হলো? তাঁদের সাজা কমল, খালাস পেল। আমরা এ রায় মানি না। রাষ্ট্রের কাছে আমাদের চাওয়া বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা যেন পার পেয়ে না যায়।’
বাবা অনন্ত দাস বলেন, ‘প্রথমে নিম্ন আদালতে যে রায় হয়েছিল আমরা খুশি হইছিলাম। কিন্তু উচ্চ আদালতে যে রায় আজকে দুজনের ফাঁসি বহাল রাখা হলো, রায় পাল্টায়া দিল, এতে আমরা খুশি না। আমরা হতাশ। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।’
দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় দুজনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী। ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া দুজন হলেন রফিকুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদার। এ ছাড়া নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত চারজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং দুজনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন— রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জি এম রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা টিপু, রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন—এ এইচ এম কিবরিয়া, ইউনুস আলী, তারিক বিন জোহর তমাল, গোলাম মোস্তফা, আলাউদ্দিন, ওবায়দুর কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল-আমিন, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, মোশাররফ হোসেন ও কামরুল হাসান।
বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রায় দেন বিচারিক আদালত।
বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ২১ আসামির মধ্যে আটজন কারাগারে এবং বাকিরা পলাতক।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নির্মম খুনের শিকার হন দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে বিশ্বজিতের দর্জি দোকান ছিল। তিনি থাকতেন লক্ষ্মীবাজার এলাকায়।