ঘরে বাবার লাশ রেখে কাঁদতে কাঁদতে এসএসসি
সারা দেশে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের বাবুরচর গ্রামের পরীক্ষার্থী তাহমিনারও অনেক ইচ্ছে ছিল ভালোভাবে পরীক্ষা দেওয়ার।
কিন্তু পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ক্যানসারে আক্রান্ত তাঁর বাবা মো. তোফাজ্জেল হোসেন নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। এই ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাহমিনা, তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজনসহ সবাই।
তাহমিনার বাবা তোফাজ্জেল হোসেন সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের মধ্য বাবুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর ক্যানসার হয়েছিল।
এদিকে তোফাজ্জেল হোসেনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাহমিনাদের বাসায় ছুটে যান বাবুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহপাঠীরা। ওই বিদ্যালয়েরই মানবিক বিভাগের ছাত্রী তাহমিনা।
প্রধান শিক্ষক ও সহপাঠীরা অনেক কষ্টে তাহমিনাকে শান্ত করে তাকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাজি করান। কাঁদতে কাঁদতে তাহমিনা যায় বেগম কাজী জেবুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে। তার বাবার মৃত্যুর খবর সেখানেও ছড়িয়ে পড়ে। সবার মাঝে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া।
পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখা যায়, তাহমিনা এক হাত দিয়ে চোখ মুছছে, তো অন্য হাত দিয়ে খাতায় উত্তর লিখছে।
এদিকে এক পরীক্ষার্থীর বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের সভাপতি সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূরবী গোলদার ছুটে যান পরীক্ষার হলে। তিনি তাহমিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। তাকে অনেক সান্ত্বনা দেন এবং মনকে শক্ত রাখতে বলেন। এ সময় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় পরীক্ষার হলে।
ইউএনও পূরবী গোলদার সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রীটি যাতে সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে যাতে দ্রুত বাড়িতে পৌঁছাতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়।
তাহমিনা পরিবারের বড় সন্তান। এ ছাড়া সংসারে তার ছোট এক ভাই, এক বোন ও মা রয়েছে। ছোট ভাই আজিজুল ইসলাম এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। ছোট বোন লাবনী বাবুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।