দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে : রাষ্ট্রপতি
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনকারী একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সব সময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করি, তোমরা কখনো ডিগ্রির মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে না।
আজ বুধবার বিকেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবনের সামনের মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭০ জন গ্রাজুয়েট অংশ নেন। তাদের মধ্যে আটজন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, পাঁচজন ভাইস চ্যান্সেলর পদক এবং ৫৬ জন ডিনস অ্যাওয়ার্ড পান।
এর আগে বেলা আড়াইটার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আব্দুলপুরে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হেলিপ্যাডে রাষ্ট্রপতি অবতরণ করেন। সেখানে তাঁকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে মোটর শোভাযাত্রা করে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন রাষ্ট্রপতি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা।
সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘তোমরা আজ গ্র্যাজুয়েট, দেশের উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নে প্রধান চালিকাশক্তি। দেশ ও জনগণের কাছে তোমাদের আছে ঋণ। একজন বিবেকবান নাগরিক হিসেবে সেই ঋণ তোমাদের পরিশোধ করা উচিত। আর একটা কথা বলি, কর্ম উপলক্ষে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, এ দেশ ও এ দেশের জনগণের কথা ভুলবে না। ভুলবে না খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণের কথা। মনে রাখতে হবে, বাঙালির শেকড় এই সাধারণ জনগণের মধ্যেই প্রোথিত। কর্মজীবনে তোমরা সফল হও, সার্থক হও- এই কামনা করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠদান কেন্দ্র নয়, বরং তা জ্ঞান সৃষ্টি ও চর্চার এক অনন্য পাদপীঠ। মুক্তচিন্তা, সমকালীন ভাবনা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নবতর অভিযাত্রাসহ সংস্কৃতি চর্চা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের জানার পরিধিকে যেমন বিস্তৃত করে তেমনি তাদেরকে পরিণত করে বিশ্ব নাগরিকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিক্ষার অন্যতম অনুসঙ্গ। এর অনুপস্থিতিতে আজ কূপমণ্ডুকতা, উগ্রবাদসহ নানামুখী অসহিষ্ণুতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্ত চিন্তার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আগামী প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করতে এবং সব স্তরে নেতৃত্বদানে সক্ষম ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাতে হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, পরমত সহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক, অভিভাবক, ছাত্রসংগঠনসহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে অবদান রাখতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নের বাহন। তাই উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে আমাদেরকে নতুন নতুন উদ্ভাবনে উদ্যোগী হতে হবে। তবে একটি জিনিস মনে রাখতে, হবে উদ্ভাবনই যথেষ্ট নয়। উদ্ভাবনকে যথাযথভাবে প্রয়োগই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু প্রযুক্তি যাতে মানুষকে ব্যবহার না করতে পারে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
সমাবর্তনের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রসায়নশাস্ত্রে নোবেল জয়ী জার্মান নাগরিক অধ্যাপক ড. রবার্ট হিউবার। তিনি তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র প্রাণ-রসায়নের ওপর বক্তব্য দেন। বাংলাদেশের বিরাট প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তি বিষয়েও কথা বলেন তিনি। নবীন গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে প্রেরণামূলক বক্তব্য দিয়ে রবার্ট হিউবার বলেন, খাদ্য, শক্তি এবং পরিবেশ বিপর্যয় এখন মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের। কিন্তু এর সমাধানও রয়েছে তোমাদের মতো যুব সমাজের মাথায়। তোমরাই যেকোনো দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন। এ সময় সেখানে সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, শেখ আফিল উদ্দিন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশীদ আসকরী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।