অবশেষে ওএসডি হিসেবে প্রত্যাহার কিশোরগঞ্জের ডিসি
সরকারি তহবিলের অর্থ আত্মসাতের কেলেঙ্কারীর অভিযোগ ওঠা কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জেলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. তমিজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে।
একই মন্ত্রালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব দেওয়ান মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত অপর এক প্রজ্ঞাপনে কিশোরগঞ্জের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীকে নিয়োগ প্রদানের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে কর্মরত।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামিল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরকারি তহবিলের ১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ নিয়ে দায়ের করা মামলায় মূল অভিযুক্ত কিশোরগঞ্জ জেলার সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) মো. সেতাফুল ইসলাম পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত হিসেবে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধরসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়টি জানান।
আদালতের একটি সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে সেতাফুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কথা মতো উনারা দুজনসহ অন্যান্য কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এবং আত্মসাৎ হওয়া টাকার বেশির ভাগ অংশ উনারা নিয়ে গেছেন।
সেতাফুল ইসলামের জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা প্রধান কার্যালয় থেকে আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল একাধিকবার আজিমুদ্দিন বিশ্বাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথি জব্দ করে তদন্ত করে দুদক। পরে জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষক মো. সহিদুজ্জামান ও অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়াকে আটক করে রিমান্ডে নেয় দুদক।
জেলা প্রশাসকের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে জেলার নাগরিক মহলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠে।
কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিয়া মো. ফেরদৌস বলেন, ওএসডি কোনো শাস্তি নয়। এটা করার অর্থ হচ্ছে তাঁকে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়া। তদন্তের স্বার্থে অবিলম্বে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা উচিত। একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যদি বিচার হতে পারে, তাহলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্তারা কেন আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন।
নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক শেখ সেলিম কবীর বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজন চুনোপুটি আটক হলেও রাঘব বোয়লরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় আমরা হতাশ। শুধু ওএসডি নয়, আমরা অবিলম্বে অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়ালদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।
গত ১৭ জানুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল বাদী হয়ে সেতাফুলকে একমাত্র আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য কিশোরগঞ্জে কয়েকশ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার সময় সেতাফুল ইসলাম জাল দলিল সম্পাদনসহ বিভিন্ন জালিয়াতির আশ্রয় নেন।