পদ সাহিত্য সম্পাদকের, কাজ প্রেম করে হয়রানি করা!
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাহিত্য সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক তিনি। নাম আশরাফুল ইসলাম ওরফে মিঠুন। সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে তিনি পড়ে থাকবেন- এমনটিই হওয়ার কথা ছিল।
তা হয়নি। স্কুল-কলেজের ছাত্রী ও গৃহবধূদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। কৌশলে সেই দৃশ্যের ছবি তুলেছেন এবং ভিডিও করেছেন। পরে তা দেখিয়ে হয়রানি করেছেন। এই রকম একটি ঘটনায় করা মামলায় কিছু দিন জেলের ভাতও খেয়েছেন আশরাফুল। ওই মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে। জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা এই অভিযোগ করেছেন।
এদিকে এত কিছুর পরও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেননি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম (নামের অর্থ ইসলামের সেরা)। সর্বশেষ এক তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুঠোফোনে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিবাহিত ওই তরুণীর সংসার শুরু না হতেই এখন ভাঙনের মুখে।
আশরাফুলের গ্রামের বাড়ি জাজিরার জয়নগর ইউনিয়নের খোড়াতলা গ্রামে। ভিডিও ছড়ানোর ঘটনার কিছু দিন পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে গেছেন তিনি।
গৃহবধূর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গৃহবধূ স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আশরাফুল দুই বছর আগে তাঁকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। এরপর শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে কৌশলে মুঠোফোনে কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। গত ২৫ নভেম্বর ওই তরুণীর সঙ্গে মাদারীপুরের শিবচর পৌর এলাকার এক ছেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ২২ ডিসেম্বর বড় অনুষ্ঠান করে মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানোর দিন ঠিক করা হয়। ২৬ নভেম্বর বরসহ ১০-১২ জন মেয়েটির বাড়িতে বেড়াতে যান। ২৭ নভেম্বর বর ও তাঁর বোন জামাই বাড়ি ফেরার সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশরাফুল তাঁদের আপত্তিকর কিছু ছবি ও ভিডিও হাতে তুলে দেন।
এ ঘটনার তিন দিন পরে আশরাফুল ও তাঁর পরিবারের লোকজন স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে মেয়েটির পরিবারের কাছে ক্ষমা চান। এরপর বরের পক্ষ থেকে জাজিরার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন লোকের কাছে আশরাফুলের কাছ থেকে নেওয়া মেয়েটির আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে বিচার দাবি করা হয়। এতে মেয়েটির পরিবার আরো ভেঙে পড়ে। এ ঘটনার পর মেয়ের বাবা শিবচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিষয়টি জানান। ঘটনার পর আজো বরের পক্ষ থেকে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘জয়নগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ’ নামে ফেসবুকের একটি আইডি থেকে ওই গৃহবধূর আপত্তিকর ছবি ও একটি ভিডিও দিয়ে একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের মেয়ের কাণ্ড লিখে ছড়ানো হয়। এরপর আরো অর্ধশত ফেসবুক আইডি থেকে তা ছড়ানো হয়। অথচ ওই ভিডিও স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যানের মেয়ের না। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
স্থানীয় লোকজন আরো জানান, এর আগে আশরাফুল একাধিক মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করেছে। এ ধরনের অপরাধের অভিযোগের একটি মামলায় তিনি জেলেও ছিলেন। এখনো সেই মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে তরুণীর বাবা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘আমার মেয়েকে অনেকদিন আগেই পার্শ্ববতী উপজেলায় বিয়ে দেওয়ার পর আশরাফুল আমার মেয়ের সর্বনাশ করেছে। আমার সম্মান ক্ষুন্ন করেছে। আমি এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিব।’
মাদারীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. এনামুল হক মুন্সি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আশরাফুল ইসলাম মিঠুনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি জাজিরা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হককে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিবে। সত্যতা পাওয়া গেলে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।
আজ বুধবার জাজিরার জয়নগর ইউনিয়নের খোড়াতলা গ্রামে আশরাফুল ইসলাম মিঠুনের বাড়ি গিয়ে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের কাউকেই পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি জাজিরা থানা পুলিশ জানার পর তাঁকে আটক করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও কোথাও খুঁজে পায়নি। তিনি পলাতক রয়েছেন।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক বলেন, ‘আমরা আপনাদের ও মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরে এলাকায় গিয়ে আশরাফুল ইসলাম মিঠুন ও তাঁর পরিবারের কাউকে পাইনি। মিঠুন পলাতক রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগেও প্রায় একই ধরনের অভিযোগে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে। ওই নববধূর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা তাৎক্ষণিক পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’