প্রসব যন্ত্রণায় কাতর মা, বালুতে জন্ম শিশুর
চারদিক থেকে তখন অন্ধকার নেমেছে। মাঠে বসে গল্প করছিল চার বন্ধু। হঠাৎ মাঠের নির্জন কোণ থেকে ভেসে আসে যন্ত্রণায় কাতর কণ্ঠস্বর। চার বন্ধু ছুটে গিয়ে দেখে, এক নারী বালুর মধ্যে পড়ে রয়েছেন। আর পায়ের কাছেই পড়ে রয়েছে সদ্য জন্ম নেওয়া এক শিশু। সে অনরবত কেঁদে যাচ্ছে। তার চোখ-মুখ জুড়ে বালু আর রক্তে মাখামাখি। জন্মসূত্রটি (নাড়ি) তখনো অক্ষত।
প্রসব যন্ত্রণায় মা তখনও চিৎকার করছিলেন। চার বন্ধু কী করবে, তাৎক্ষণিক ভেবে উঠতে পাচ্ছিল না। দেরি না করে তারা আশপাশের বাসা থেকে কয়েকজন নারীকে ডেকে নিয়ে আসে। কিন্তু এ যেন অচ্ছুত! কেউ মা আর শিশুটিকে আলাদা করার কাজে এগিয়ে আসেনি।
মাদারীপুর শিবচর উপজেলার হাতির বাগান এলাকায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ ঘটনাটি ঘটে। যে নারী এই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তিনি এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে পরিচিত। অনেকে ‘পাগলি’ নামেও ডাকে। ঘটনার চার দিন পরেও আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুটির পিতৃপরিচয় মেলেনি।
মা ও শিশুটি এখন চিকিৎসাধীন আছে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানকার আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুলতানুল মালিহা নাজনীন জানান, ওই নারী ও তাঁর সন্তান এখন সুস্থ আছে। ওই নারী মানসিক প্রতিবন্ধী। এখনও তাদের কোনো অভিভাবক পাওয়া যায়নি। তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
সেদিন সন্ধ্যায় ওই মাঠে বসে গল্প করছিল জাহিদ হাসান অমি, লিটু আহমেদ, ইফাদ ইসলাম রাজিব ও শাহরিয়ার সাগর। এলাকার নারী-পুরুষরা এগিয়ে না আসায় তারাই একজন চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে আসে। তারা শিশুটির নামও দিয়েছে, জান্নাতুল হাবিবা হুমাইরা।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এনটিভি অনলাইনকে জাহিদ হাসান অমি বলে, ‘আমরা চিন্তাও করিনি এ রকম নির্জন জায়গায় কোনো বাচ্চার জন্ম হতে পারে। প্রথমে ভেবেছিলাম বাঁশি বাজছে বা অন্যকিছু। এরপর কৌতুহলবশত ইব্রাহিম সেখানে গিয়ে চিৎকার করে জানায়, একটি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। দৌঁড়ে আমরা সেখানে যাই। দেখি, বাচ্চাটা বালির ভেতর থেকে যেন উঠছে। সঙ্গে ময়লা কাপড় আর রক্ত। এরপর আমাদের পারিবারিক একজন চিকিৎসককে ডেকে আনি। পরে নাড়ি কেটে মা ও শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
আরেক শাহরিয়ার সাগর বলে, ‘এখন সবার কাছে একটাই দাবি। বাচ্চাটিকে নেওয়ার জন্য সবাই এগিয়ে এসেছে। আমরা চাচ্ছি, এমন একটি ফ্যামিলিকে দিতে যারা বাচ্চাটির ভরণ-পোষণ করতে পারে। বাচ্চাটাকে শিক্ষা দিতে পারবে। সারা জীবন তাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারে। আমরা চাই সে একটি ভালো পরিবার খুঁজে পাক।’