আ. লীগ নেতার পাথর কোয়ারিতে চলে গেল ৫ শ্রমিকের প্রাণ
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদের পাথর কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন পাঁচ শ্রমিক। আহত হয়েছেন তিন শ্রমিক।
গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের হাজিরডেগনার সীমান্ত এলাকায় গর্ত ধসে মাটিচাপায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে আজ সোমবার দুপুরে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর পাথর কোয়ারিতে গর্ত ধসে মাটিচাপায় আরো একজন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন অন্তত ১০ জন।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে ভোলাগঞ্জের হাজিরডেগনার সীমান্ত এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আলী আমজাদের কোয়ারিতে জেনারেটর চালিয়ে গর্ত থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল। রাত ১০টার দিকে ওই গর্তে মাটি ধসে পড়ে। রাতেই দুই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আহত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। আজ বেলা ১১টার দিকে ওই গর্তে অভিযান চালিয়ে আরো দুটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর বিকেল ৩টায় একই গর্ত থেকে আরেকটি লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। গর্তে আরো লাশ মাটিচাপা পড়ে আছে বলে জানায় তারা।
কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিলীপ নাথ বলেন, পুলিশ এ পর্যন্ত পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাথর কোয়ারির মালিক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই পাথর কোয়ারির শ্রমিক সর্দার আবদুর রউফকে (৫০) আটক করেছে।
ভোলাগঞ্জে নিহত শ্রমিকরা হলেন সুনামগঞ্জের মুরাদপুর এলাকার আসকর আলীর ছেলে রুহুল আমিন (২২), একই এলাকার হযরত আলীর ছেলে মতিবুর (৩২), জামালগঞ্জ উপজেলার কলকটা গ্রামের আতাবুর রহমান (৩০), দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ছলেরবন গ্রামের আশিক আলী (৩০) ও সুনামগঞ্জের রইছউদ্দিনের ছেলে মঈন উদ্দিন (৩২)।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন রুহেল (১৮), রফিকুল (১৬) ও ফিরোজ আলী (৪৫)। এঁদের মধ্যে ফিরোজ আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
হতাহতের ঘটনায় পাথর কোয়ারির মালিক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদের বক্তব্য জানতে আজ সোমবার একাধিক বার তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে, জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. মঈনুল জাকির জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে উপজেলার শ্রীপুরে নাজিম উদ্দিনের মালিকানাধীন কোয়ারিতে পাথর উত্তোলনের সময় গর্ত ধসে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক আহত হন। এঁদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে দেলোয়ার হোসেন (২৬) নামের এক শ্রমিক মারা যান। দেলোয়ার জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের লালা গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারিতে টিলা ও গর্ত ধসে অন্তত ৪০ শ্রমিক মারা গেছে। এর মধ্যে গত বছরের ২৩ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা ধসে পাঁচজন, একই টিলা ধসে ১ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দুজন এবং ২ ও ৬ মার্চ, ২০ জুলাই ও ২৬ অক্টোবর আরো চারজন মারা যায়।