ভৈরবে কমান্ডার আব্দুর রউফ স্মরণসভা
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কমান্ডার, ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ঔপন্যাসিক আব্দুর রউফের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা হয়েছে। কমান্ডার আব্দুর রউফ স্মৃতি পরিষদ আজ মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ আ. ক. মোবারক আলী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট, বঙ্গবন্ধুসহ অভিযুক্ত ৩৫ জনের গ্রেপ্তার, কারাজীবন, মুক্তি এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন ওই মামলার অন্যতম আরেক অভিযুক্ত ফ্লাইট সার্জেন্ট (অব.) আব্দুল জলিল।
এ সময় আব্দুল জলিল প্রয়াত আব্দুর রউফকে তাদের মধ্যকার বাতিঘর হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের জন্য অনেক সময় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্বয়ং আব্দুর রউফের পরামর্শ চেয়ে নিতেন বলে উল্লেখ করেন।
আব্দুল জলিল তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, ‘পাকিস্তানিদের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করতে অনেকেই স্বপ্ন দেখে থাকতে পারেন। এতে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন আমরাই প্রথম দেখি। অর্থাৎ ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধুসহ আমরা ৩৫ জন। তৎকালীন পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে থাকা বাঙালি অফিসাররা আমরা প্রথমে নিজেদের মধ্যে সশস্ত্র অভ্যুত্থান নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। পরে ১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ নিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনা করে তাঁর মতামত জানতে চাইলে তিনি অনুমতি দিয়ে বলেন, ‘গো এহেড। তোমরা তোমাদের মতো করে এগিয়ে যাও।’ তখন আমাদের এই কথা বঙ্গবন্ধু ছাড়া আরো দুই ব্যক্তি জানতেন। তাঁরা হলেন, বেগম মুজিব আর তাজউদ্দিন আহমেদ।’
আব্দুল জলিল আরো বলেন, ‘সরকার আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দিলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যথেষ্ট খেয়াল রাখেন। মন্ত্রী পরিষদের অনেক সিনিয়র সদস্য, আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতারা আমাদের সম্মানের চোখে দেখেন।’
স্মরণসভায় এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মরহুমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, মেয়ে বিশিষ্ট লেখিকা গীতালি হাসান, রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. রফিকুল ইসলাম।
ভৈরব প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হাকিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই স্মরণসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক আদিল উদ্দিন, জাহানুল হক বাবুল, আনোয়ার হোসেন, মতিউর রহমান মাস্টার, আশরাফ আলী, আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া, আজিজুল হক মজনু, মহিউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা বাবর আলী প্রমুখ। পরে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।