ফায়ার সার্ভিস, রেলওয়ে ও ওয়াসার ডিজির বিরুদ্ধে রুল
রাজধানীর শাজাহানপুরে পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণে হাইকোর্টের নির্দেশ পালন না করায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এবং ওয়াসার মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আদালতে এই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম।
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম জানান, এর আগে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অবহেলার দায়ে জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পরে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত রায়ে বলা হয়, জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে চরম অবহেলার প্রমাণ পেয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে ওয়াসা, রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিসকে ১০ লাখ করে টাকা ৯০ দিনের মধ্যে জিহাদের বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু নির্দিষ্ট ৯০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের ওই আদেশ বাস্তবায়ন করেননি তিন বিভাগের মহাপরিচালক। যার সময়সীমা গত ১ জানুয়ারি অতিবাহিত হয়েছে। এ কারণে হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের জবাব না পেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।
২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট রায় দেন। এর আগে এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন একই বেঞ্চ।
একই সঙ্গে জিহাদের মৃত্যুতে ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, রেলওয়ে ও সিটি করপোরেশনের অবহেলা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ফায়ার সার্ভিস,ওয়াসা ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সারা দেশে কতগুলো অরক্ষিত পাইপ, ঢাকনাবিহীন পাইপের গর্ত ম্যানহোল ও পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ রয়েছে- তার একটি তালিকা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চান আদালত। পাশাপাশি আগের দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে এবং ট্রেনিং করেছে তার তথ্য গত বছরের ১৫ মের মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে খোলা কয়েকশ ফুট গভীর একটি নলকূপের পাইপে পড়ে যায় চার বছরের জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানে ক্যামেরা নামিয়েও ফায়ার সার্ভিস কোনো মানুষের ছবি না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের অস্তিত্ব থাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। এর কয়েক মিনিট পর কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে উঠে আসে অচেতন জিহাদ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।