খণ্ডিত ইতিহাস সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারে না : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, খণ্ডিত ইতিহাস কোনো জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মুক্তিযুদ্ধে কার কী অবদান তা আমাদের পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে। আর এজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বিগত দিনে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক মিথ্যাচার করেছে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস শিক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। যারা ইতিহাস বিকৃত করেছে তারা সবকিছুই জেনেশুনেই করেছে। তারা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভয় পায় বলেই এসব করেছে এবং করছে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি এখনো ৭১-এ তাদের পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে পারেনি। তাই এসব অপশক্তি সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। এরা দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের শত্রু। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে তাদের যেকোনো ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা রুখে দাঁড়াতে হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোমবার বিকেলে গাজীপুর শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর ও শহীদদের স্মরণে নাগরিক গণসংবর্ধনা এবং আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন।
১৯ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবস উদযাপন কমিটি আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে কমিটির সদস্য সচিব এবং গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আমরা এখন স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশটির জন্ম সে দেশ আজ সগৌরবে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, জেন্ডার সমতাকরণ, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসকরণসহ বহু বিষয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ অবশ্যই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে শামিল হতে সক্ষম হবে। স্বাধীনতার এই মাসে তাই আসুন, আমরা দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে ১৯৭১ সালের মতো দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে গাজীপুরবাসী যে বীরত্ব ও সাহস দেখিয়েছিলেন তা আমাদের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঐতিহাসিক ১৯ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক। এ প্রতিরোধ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিকে ত্বরান্বিত করে এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণকেও উৎসাহিত করে। ১৯ মার্চের ঘটনা মূলত তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীর অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেরই বহিঃপ্রকাশ।
এর আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ হেলিকপ্টারে করে দুই দিনের সফরে আজ গাজীপুরে আসেন। পরে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামানসহ দলীয় নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় রাষ্ট্রপতিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী উত্তরীয় ও ক্রেস্ট দেন। রাষ্ট্রপতিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। ভাষণের আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নৃত্য ও কোরাস পরিবেশন করা হয়। বক্তব্য শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
গাজীপুরে দুদিনের সফরকালে রাষ্ট্রপতি কারা সপ্তাহ ২০১৮-এর উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার প্রাঙ্গণে আয়োজিত কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করবেন। এ সময় তিনি বেলুন উড়িয়ে কারা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন এবং সেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পুরস্কার দেবেন। একই দিন বিকেল ৩টায় তিনি গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ সময় তিনি গ্রাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান ও তাদের মধ্যে সনদ দেবেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন বিভাগের ৩৫ জন কৃতি গ্রাজুয়েটকে স্বর্ণ পদক বিতরণ করবেন এবং অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন।