পুলিশের অভিযান চালানো রাজধানীর মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগে আলিম উদ্দিন স্কুলের পাশের গলির বাসাটি আজ থেকে সাত মাস আগে হাসান নামের একজনের মা ভাড়া নেন। এরপর থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ হাসান ওই বাসাটিতে থাকেন বলে জানিয়েছেন বাসাটির তত্ত্বাবধায়ক মো. মিঠু মিয়া।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মধ্য পীরেরবাগ এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) পল্লবী জোনাল টিমের একটি দল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যায়। পুলিশ সদস্যরা সেখানকার ১০৫/এ/১ বাড়িটি ঘিরে ধরলে সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে পরিদর্শক জালালউদ্দিনের মাথায় গুলি লাগে। হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ২টার দিকে তিনি মারা যান। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন অপর এক পুলিশ সদস্য। অভিযানের সময়  হাসান নামের এক সন্ত্রাসী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়।

ওই ভবনের পাশের একটি ভবনের মালিক জমিরউদ্দীন সরকার। পীরেরবাগে বেড়ে ওঠা জমিরউদ্দীন এনটিভি অনলাইনকে বলেন,  ‘বাড়িটির মূল মালিক মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী লাভলী বেগম কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এখন বাসাটির মালিক তাঁদের মেয়ে শারমিন আক্তার।  শারমিন আক্তার পীরেরবাগ এলাকার পাবনা গলিতে বসবাস করেন। এই বাসায় তিনি থাকেন না। ফলে বাসাটি দেখাশোনা করেন শারমিন আক্তারের মামা মো. মিঠু মিয়া।’

পাশের ভবনের একটি ফ্লাটের ভাড়াটিয়া মো. মনির হোসেন বলেন, ‘অনুমানিক রাত ১২টার দিকে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ। বাইরে এসে দেখি চারিদিকে পুলিশ। শুনলাম, এক পুলিশকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে পালিয়েছে।’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাসার সামনে অপর একটি বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। আর ওই বাড়িটিতে ঢোকার পথ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। বাড়িটিতে প্রবেশের জন্য ছোট একটি কেচি গেট রয়েছে। গেটে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মো. মিঠু মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভবনটির তৃতীয় তলার দুটি রুমে সাত মাস ধরে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ হাসান ভাড়া থাকেন। মাঝে মাঝে হাসানের মাও এখানে এসে থাকেন। মূলত বাসাটি হাসানের মা ভাড়া নিলেও থাকেন হাসান।’

মিঠু মিয়া আরো বলেন, ‘হাসান নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিতেন। হাসান কাশিমপুরে ভাঙা টিভি কেনাবেচার ব্যবসা করেন বলে জানি আমি। এর বাইরে তাঁর ঘরে অস্ত্র থাকে নাকি অন্য কিছু থাকে তা তো ঘরে ঢুকে জানা সম্ভব নয়।’ পুলিশ হাসানের স্ত্রীসহ দুই সন্তানকে আটক করে নিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

সোমবার রাতে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনার পরে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি সাংবাদিকের জানান, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাড়িতে গোয়েন্দা পুলিশ  অভিযান চালিয়েছিল। অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ‍পুলিশের দুই সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দিন মারা যান।

আছাদুজ্জামান মিয়া আরো জানান, বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সম্ভবত সন্ত্রাসীরা বাসার পেছনের বারান্দা বা  দেয়াল টপকে পালিয়ে গেছে। তবে ওই বাড়ি থেকে নারীসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এরা কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর কেউ কি না এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সব কিছুই ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহমেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন,  পুলিশের ওপর গুলি চালালে দুজন আহত হন। এর ভেতরে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টার দিকে জালাল উদ্দিন মারা গেছেন। তবে এই হামলাকে আমরা এখন পর্যন্ত জঙ্গি হামলা হিসেবে দেখছি না।

হাসান ছাড়া আর কেউ পালিয়ে গেছে কি না জানতে চাইলে মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘এটা তদন্তের বিষয়। ডিবি এটা নিয়ে তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলে সব কিছুই বলা যাবে।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিবি কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, হাসান ভোটার আইডিসহ যেসব তথ্য বাড়িওয়ালাকে দিয়েছিল সেগুলোর সবই ভুয়া।

এই হামলাকে আপনারা জঙ্গি হামলা হিসেবে দেখছেন কি না এমন প্রশ্নে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা তিনজনকে হাসানের স্ত্রী-সন্তানদের ডিবি অফিসে নিয়ে এসেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা আরো বিস্তারিত তদন্ত করব। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে এখন আর কিছুই জানাতে পারব না।’