ফয়সাল ও নাজিয়ার অন্যরকম ফেরা
নিজ এলাকায় ফিরলেন আহমেদ ফয়সাল। শরীয়তপুরে নিজ এলাকার মাটিতে দাফন করা হয়েছে সাংবাদিক ফয়সালের লাশ। অন্যদিকে নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর লাশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে ঢাকায়। নিজ শহরে ফিরলেন নাজিয়াও।
নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত শরীয়তপুরের ফয়সাল ও নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর লাশ ১৫ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করে রদবদল করা হয়েছে।
ফয়সাল ছিলেন বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক।
গত ১২ মার্চ নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ফয়সাল ও নাজিয়া ছিলেন। গত ১৯ মার্চ তাঁদের লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু রদবদলের কারণে নাজিয়ার লাশ চলে যায় ফয়সালের স্বজনদের কাছে। শরীয়তপুরের ডামুড্যায় দাফনও হয়ে যায় নাজিয়ার লাশ। অন্যদিকে ফয়সালের লাশ রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করেন নাজিয়ার স্বজনরা।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ফয়সালের লাশ রাজধানীর বনানী কবরস্থান থেকে উত্তোলন করে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় শরীয়তপুরের ডামুড্যায় আনা হয়। এ সময় ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজী আক্তার ও ডামুড্যা থানা পুলিশের উপস্থিতিতে নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর লাশ উত্তোলন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। একই সঙ্গে ফয়সালের লাশ ওই কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা যায়, ফয়সাল ও নাজিয়ার লাশ গত ১৯ মার্চ বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় ফয়সালের লাশের পরিবর্তে ঢাকার নাজিয়ার লাশ শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ফয়সালের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে ফয়সালের লাশ নাজিয়া ভেবে বনানী কবরস্থানে ও নাজিয়ার লাশ ফয়সাল ভেবে নিহত ফয়সালের গ্রামের বাড়ি ডামুড্যা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সর্দার গার্ডেন বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন করা হয়। লাশ দাফনের সময় ফয়সালের স্বজনরা পলিথিনে মোড়ানো লাশের গায়ে নাজিয়া আফরিন লেখা দেখেন। ফয়সালের লাশ নয় বিষয়টি নিশ্চিত হয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে স্বজনরা নাজিয়া আফরিনের লাশই দাফন করেন।
একইভাবে ঢাকার সূত্রাপুরের টিপু সুলতান রোডের বাসিন্দা নাজিয়ার স্বজনরা নাজিয়ার লাশ মনে করে ফয়সালের লাশ বনানী কবরস্থানে দাফন করেন।
বিষয়টি উভয় পরিবার জানার পর আবার লাশ উত্তোলন করে নির্ধারিত স্থানে নতুন করে দাফনের জন্য আদালতের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে পৃথক আবেদন করেন ফয়সাল ও নাজিয়ার পরিবার। গত মঙ্গলবার ফয়সালের লাশ নাজিয়ার পরিবারের কাছে এবং নাজিয়ার লাশ ফয়সালের পরিবারের কাছে ভুলক্রমে হস্তান্তর করা হয়েছিল মর্মে আদালতে হলফনামাসহ মরদেহ বদলের আবেদন করেন উভয়ের পরিবার।
মরদেহ সঠিকভাবে হস্তান্তরের জন্য ফয়সালের ভাই সাইফুল ইসলাম ও নাজিয়ার ভাই আলী আহাদ চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে যার যার স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘নাজিয়া আফরিন চৌধুরীর লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতের একটি নির্দেশনা পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজী আক্তারকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ডামুড্যা থানা পুলিশের সহায়তায় লাশ উত্তোলন করে তা নাজিয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ ৭১ আরোহী নিয়ে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ-মুহূর্তে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত হন।