বখাটেদের কারণে অতিষ্ঠ ছাত্রীদের জীবন!
দল বেঁধে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন মেয়েরা। চলছে হাসিঠাট্টাও। কিন্তু অপরিচিত কিছু ছেলে হঠাৎ গায়ে টোকা মারছে, আড়চোখে অশালীন ভাষায় কথা বলছে, করছে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি। আর কোণঠাসা হয়ে পড়ছে মেয়েগুলো। ময়মনসিংহ শহরের গোলকিবাড়ী এলাকার এটাই প্রতিদিনের চিত্র।
ময়মনসিংহ শহরের সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, ময়মনসিংহ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মুমিনুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী গোলকিবাড়ী এলাকার মেসগুলোতে থেকে তাঁদের পড়াশোনা চালান।
তবে এলাকার কিছু নেশাখোর ও বখাটের কবলে ছাত্রীরা বর্তমানে চরম অনিরাপত্তায় রয়েছেন। তাদের এই দুর্বৃত্তায়ন থেকে বাদ পড়ছেন না সাধারণ ছাত্ররাও। এমনকি ছেলেমেয়েদের দেখতে এসে তাদের স্বজনরাও ছিনতাই ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাস্তায় বের হলেই আমাদের শরীরের ওপর অযাচিতভাবে ঠেস দেয়, হাত ধরে টানাটানি করে। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির পাশাপাশি শরীর ঘেঁষে চলা আর গা ঘিনঘিন করা সব অশ্লীল গালাগাল শুনতে হয় আমাদের। ভয়ে কিছু বলতে পারি না। অভিভাবককেও জানাই না। আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অভিভাবকরা যদি পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই বাড়িতে নিয়ে যান। আমরা খুব অসহায়।’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কখনো কখনো বড় বা ছোট ভাই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলে না বুঝেই তাদের ওপর চড়াও হয় বখাটেরা। চিকিৎসা নিতে আসা স্বজনরাও রেহাই পান না। তাদের মারধর করা ছাড়াও সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয়।’
ময়মনসিংহের গোলকিবাড়ী এলাকার ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন এনটিভির এই প্রতিবেদক । ছবি : এনটিভি
গোলকিবাড়ী এলাকায় ছাত্রছাত্রী নিবাসের মালিকদের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিবাসের মালিক অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু বখাটের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকি। মেয়েরা আমাদের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। তাদের নিরাপত্তা নিয়েও আমাদের উৎকণ্ঠার সীমা নাই। চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবন ও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। প্রতিবাদ করতে পারছি না।’
এ ছাড়া বখাটেদের চলাফেরা নিশ্চিত করতে এলাকার সিকিউরিটি লাইটগুলো কিছুদিন পরপর ভেঙে ফেলা হয়।
গত শনিবার বেলা ১১টায় গোলকিবাড়ী মসজিদের মুয়াজ্জিনের ঘরের তালা ভেঙে এমপ্লিফায়ার চুরি ও ঘর তছনছ করার ঘটনা ঘটে। এরই তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায় ছাত্রীদের দুঃসহ কাহিনী।
গোলকিবাড়ী এলাকায় ছাত্রছাত্রী নিবাসগুলোর মধ্যে রয়েছে আতিকুর রহমান আতিক ছাত্রী ও ছাত্রনিবাস, মাহবুবুল আলমের পিতৃছায়া ছাত্রনিবাস, হাফিজুর রহমানের রওশন আরা ছাত্রীনিবাস, গিয়াস উদ্দিন আহমেদের আহাম্মদ ভিলা ছাত্রী ও ছাত্রনিবাস, নিকুঞ্জ ছাত্রীনিবাস, মোস্তফার ছাত্রীনিবাস ও আসাদুজ্জামান ছাত্রীনিবাস।
এর মধ্যে আতিক ছাত্রীনিবাসের গলিতে নেশাখোরদের আনাগোনা বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া ওই এলাকায় আরো ২০ থেকে ২৫টি ছাত্রছাত্রী নিবাস রয়েছে। এগুলোতে প্রায় দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বসবাস করেন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ শহরের ২ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজীব রহমান বলেন, ‘মসজিদে চুরির ঘটনা সত্য। তবে শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।’
তবে অভিযোগ না করলেও স্বাভাবিক দায়িত্ববোধ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।