ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক, তদন্ত কমিটি গঠন
গাজীপুরের টঙ্গীতে কমিউটার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আজ রোববার টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকায় জামালপুর থেকে ঢাকাগামী দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাঁচজন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সব রুটে ট্রেন চলাচল প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। নিহতদের মধ্যে একজন ছাড়া অন্যদের বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
যা ঘটেছিল
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এস এম রাকিবুল হক জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেন ১৩টি বগিসহ যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। ট্রেনের অধিকাংশ যাত্রীই শব-ই-মেরাজ এবং পহেলা বৈশাখ পালন করে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরছিল। পথে বেলা সোয়া ১২টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশন থেকে ডাউন লাইন দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয় ওই ট্রেন। কমিউটার ট্রেনটি টঙ্গীর রেলওয়ে জংশনের সামান্য দক্ষিণে নতুন বাজার এলাকায় ‘চেঞ্জার পয়েন্ট’ পার হওয়ার সময় আটটি বগি পার হলেও হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে প্রচণ্ড শব্দে পেছনের পাঁচটি বগি লাইন চ্যুত হয়ে যায়। লাইনচ্যুত বগিগুলোর মধ্যে দুটি বগি ডাউন লাইনের ওপর কাত হয়ে যায় এবং অপর দুটি বগি ওই লাইনের পার্শ্ববর্তী উত্তরবঙ্গগামী লাইনের (আপ) ওপরে উঠে যায়। এ ছাড়াও লাইনচ্যুত হয়ে একটি বগি দুইলাইনের মাঝে নিচে নেমে যায়। এ ঘটনায় কমিউটার ট্রেনের পেছনের ওই বগিগুলো মূল ট্রেনের সংযোগস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কয়েকশ গজ দূরে গিয়ে থেমে যায়। এতে কমিউটার ট্রেনের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ট্রেনের ছাদ ও দরজা থেকে বেশ কয়েক যাত্রী ছিটকে নিচে পড়ে।
আত্মরক্ষার জন্য চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তিন যাত্রী নিহত হন। ওই ঘটনায় কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ আহত হয়। প্রায় একই সময় উত্তরবঙ্গগামী অপর লাইন (আপ) দিয়ে ডেমু ট্রেন ঢাকা থেকে গাজীপুর যাচ্ছিল। ডাউন লাইন দিয়ে ঢাকাগামী কমিউটার ট্রেনের এ দুর্ঘটনা এবং বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়ে আপ লাইনের ওপর উঠে পড়তে দেখে ডেমু ট্রেনের চালক দক্ষতার সঙ্গে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন। এতে অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে যাত্রীরা রক্ষা পায়।
স্থানীয়রা ও পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়।
গুরুতর আহত সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শাহাদত (৩৭) নামের একজন মারা যান। এ ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে সিলেট, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনাসহ উত্তরবঙ্গ রুটের সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিভিন্নস্থানে বেশ কয়েকটি ট্রেন দীর্ঘ সময় আটকে থাকে। খবর পেয়ে রেলওয়ের উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং উদ্ধার কাজ শুরু করেন। তাঁরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর উত্তরবঙ্গগামী আপলাইন থেকে দুর্ঘটনা কবলিত বগিগুলো সরিয়ে নিতে সক্ষম হন। পরে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিকল্প উপায়ে আপ লাইন দিয়ে রেশনিং পদ্ধতিতে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হালিমুজ্জামান জানান, জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা কমিউটার ট্রেনটি টঙ্গী স্টেশন থেকে ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার জন্য সিগনাল দেওয়া হয়। স্টেশনের সীমানা অতিক্রম করার সময় ইঞ্জিন থেকে বগিগুলো সংযোগ ছিঁড়ে আলাদা হয়ে পড়ে। এ সময় লাফিয়ে পড়ে যাত্রীরা হতাহত হন।
এ ব্যাপারে জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক এস এম রাকিবুল হক জানান, দ্রুত লাইন চেঞ্জ করার ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
আহতদের চিকিৎসা করাবে সরকার
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক ও রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্ত্রী জানান, নিহতদের আর্থিক সহায়তা করা হবে এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হবে।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াসিন জানান, টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামানকে প্রধান করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার রাত ৮টার দিকে প্রায় একই স্থানে ঢাকা থেকে আখাউড়াগামী তিতাস এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল। ট্রেন লাইনচ্যুতির সময় আতঙ্কিত যাত্রীরা ট্রেন থেকে লাফালাফি করে নামতে গিয়ে পাঁচ যাত্রী আহত হন। পরে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করলে রাত ১১টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।