‘খোঁজ-খবর নিতেই তিনজনকে আনা হয়েছিল’
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ কারণ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল এবং উপাচার্যের বাসায় লুটপাট করেছে, তাদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতেই নেতৃত্বদানকারী তিনজনকে নিয়ে আসা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনজনকে চোখ-মুখ বেঁধে ধরে আনার কারণ জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান বলেন, তাঁরা যেহেতু নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাই হামলাকারীদের তাঁরা চিনেন কি না- এ বিষয়ে জানতেই তাঁদের ডিবি অফিসে আনা হয়। এর বাইরে আর কিছু হয়নি।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম আহ্বায়ককে আজ সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে আটক করেছিল পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তবে এক ঘণ্টা পর তাঁদের ছেড়ে দেয়। এরপর তিন নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। যাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাঁরা হলেন নূরুল হক নূর, রাশেদ খান ও ফারুক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে আহতদের দেখতে তাঁরা তিনজন রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে যাওয়া মাত্র সাদা পোশাকের ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য অস্ত্র দেখিয়ে তাঁদের তিনজনকে মাইক্রোবাসে ওঠায়। এরপর একজনের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। এ অবস্থায় ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাঁদের বলেন, তাঁদের কাছ থেকে কিছু তথ্য নেবেন এবং ভিডিও দেখাবেন। এরপর তাঁদের গুলিস্তানে নিয়ে যান। সেখানে ডিবি পুলিশের সদস্যরা কয়েকটি গামছা কেনেন। এরপর গামছা দিয়ে তাঁদের বাকি দুজনের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলেন। রমনায় ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাঁদের চোখ-মুখ খোলা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ। এরপর তাঁরা ক্যাম্পাসে চলে আসেন।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘ডিবি পুলিশের সদস্যরা আমাদের গাড়িতে ওঠানোর সময় আরো বলেন, আমাদের ওপর নাকি বিপক্ষ গ্রুপ হামলা চালাবে। এ জন্য আমাদের নিরাপত্তার জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।’
রাশেদ খান অভিযোগ করেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ পৌরসভায়। আজ সকালে ঝিনাইদহ থানার পুলিশ তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়। দুপুরে তাঁর বাবা নবাই বিশ্বাসকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ করা হয়েছে। তাঁর বাবা ও তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবু পুলিশ জোর করে তাঁদের পরিবারকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যুক্ত করার প্রমাণ করতে চাইছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল বের করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তাঁরা কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেননি।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন নেতাকে আটকের ব্যাপারে ডিবি পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ডিবি পুলিশের পক্ষে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান কথা বলেছেন।