হাত হারানো হৃদয়কে বাঁচাতে ছুটেছিলেন যে ছাত্রী
গোপালগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে হৃদয় মিনার নামের এক বাসশ্রমিকের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর মারাত্মক আহত হৃদয়কে বাঁচাতে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। আর পুরোটা সময় এই তাঁকে বাঁচাতে ছুটছিলেন এক কলেজছাত্রী, রাহিমা মনি।
আর কিছু নয় শুধু মানবতার খাতিরেই এগিয়ে এসেছিলেন বলে জানান ঢাকার ইডেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের এই ছাত্রী।
রাহিমা মনি বলেন, ‘একই বাসে করে আমরা ঢাকায় যাচ্ছিলাম। হৃদয়ের কোনো স্বজন তাঁর সঙ্গে ছিল না। তাঁর বিপদে মানবিক কারণে আমি এগিয়ে আসি। ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করে আমি গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করি। সার্বক্ষণিক আমি তাঁর সঙ্গে আছি। চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। চিকিৎসকেরা তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। রাতেই জ্ঞান ফিরেছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি হৃদয় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।’
আহত হৃদয়ের বাবা রবিউল মিনার বলেন, ‘রাহিমা মনি মেয়ে হয়েও সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। আমার ছেলের প্রাণ বাঁচাতে তিনি ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি মানবতাবাদী মানুষ। এ কারণে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তিনি এ কাজটি করেছেন। তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানানোর মতো ভাষা আমার জানা নেই। আমি তাঁর সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করি।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার কাজীপাড়া গ্রামের রাহিমা মনি টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ওই বাসেই একেবারে পেছনের সিটে বসে ঢাকায় যাচ্ছিলেন বাসশ্রমিক হৃদয়। বাসটি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক অতিক্রম করার সময় বাসের পেছনের অংশে সজোরে ধাক্কা মারে। এ সময় হৃদয় মিনারের ডান হাত বাহু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরে হৃদয় মিনারকে উদ্ধার করে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি করা হলে, রাতেই হৃদয়ের জ্ঞান ফিরে আসে। আর ঘটনার শুরু থেকে এই পর্যন্ত সাহসী ভূমিকা রেখে হৃদয়ে পাশে রয়েছেন রাহিমা মনি।