বাংলাদেশি সাংবাদিকের পুলিৎজার জয়, কিছু কথা
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে পালিয়ে ৪০ দিন বয়সী সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে আসছিলেন এক মা। পথেই নৌকাডুবে মারা যায় শিশুটি। আদরের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে সমানে কেঁদে চলেছেন মা, চুমু খাচ্ছেন।
এমনই হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের ছবি তুলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্সে কর্মরত বাংলাদেশি ফটোসাংবাদিক পনির হোসেন। আর এই ছবি দিয়েই তিনি জিতে নিলেন সাংবাদিকতার জগতের সবচাইতে সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার।
আজ পনির হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। কেমন ছিল ওই ছবি তোলার মুহূর্তটি, কেমন ছিল তাঁর অভিজ্ঞতা?
রয়টার্সে কর্মরত বাংলাদেশি ফটো সাংবাদিক পনির হোসেনের তোলা ছবি। এই ছবির মাধ্যমেই তিনি জয় করে নেন পুলিৎজার পুরস্কার। ছবি : এনটিভি
পনির হোসেন বলেন, ‘শেষ ছবি তোলার ওই মুহূর্তে তখনই ওইখানে একটা সিএনজি ছিল, সিএনজির ড্রাইভার হঠাৎ করে বলে উঠল যে, ওইদিকে একটা নৌকা ডুবছে, মারা গেছে। তখন আমরা সঙ্গে সঙ্গে ওই সিএনজি দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে সেইখানে গিয়ে যেটা দেখি, সেটা অবর্ণনীয়। একজন মা তাঁর শিশু বাচ্চা নিয়ে কাঁদছে। তাঁকে চুমু দিচ্ছে। এটা আসলে অবর্ণনীয়, ওইখানে না থাকলে বোঝা যায় না।’
তবে পুরস্কার জয়ের মাধ্যমে নিজের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে বলে জানান এই ফটোসাংবাদিক। তাঁর তোলা ছবি আন্তর্জাতিক নীতি-নির্ধারকদের মনে সাড়া জাগিয়েছে এটাই তাঁর খুশির জায়গা- এমনটাও জানান পনির হোসেন।
পনির হোসেন বলেন, ‘আমার একটা ছবি যখন ইউএসএর সিনেটে আলোচনা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে, তখন ওইখানে দেখলাম যে আমার একটা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। যে তাঁরা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছে, আমার একটা ছবি ওইখানে দেখাচ্ছে। যে তাদের কী অবস্থা। এইটা হচ্ছে একটা খুশির জায়গা। তাঁরা দেখছেন, তাঁরা চিন্তা করছেন। একবার হলেও তো ভাবছেন যে, তাদের দায়িত্বটা কী হওয়া উচিত। নিপীড়িত মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনে তাদের কী করার আছে। এই জিনিসগুলা কিন্তু তাদের ভাবাচ্ছে।’
পনির হোসেনের এই ছবিটিসহ রোহিঙ্গাদের নিয়ে রয়টার্সের আরো দু’টি ছবি স্থান পেয়েছে পুলিৎজার পুরস্কারের ফিচার ফটোগ্রাফিতে।
যার একটিতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় একদল রোহিঙ্গা তুমুল বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সেখানে তাদের আটকে রেখেছে। অন্যটিতে ভেলায় চড়ে নদীপথে বাংলাদেশের আসা একদল রোহিঙ্গাকে দেখা যায়।
২০১০ সালে পনির হোসেন ছবি তুলতেন শখের বসে। সেই শখই একদিন পরিণত হয় পেশায়। ২০১৬ সালে পনির হোসেন যোগ দেন রয়টার্সে। আর দুই বছরের মাথায়ই তিনি জয় করে নিলেন পুলিৎজার।