সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ যৌক্তিক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সম্পাদক পরিষদ প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তা যৌক্তিক। তারা যে এগুলো পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে তাও যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
এদিকে, সম্পাদক পরিষদের পক্ষে ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মাহফুজ আনাম ব্রিফিং করেন।
বৈঠকটি আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আইনমন্ত্রী। আরো উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা এই আইনটি করেছি ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য। এখন আইনটির ছয়টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ আপত্তি পেশ করেছে। আইনটি জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। এখন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী ২২ তারিখে আইসিটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি তাদের (স্থায়ী কমিটি) বলব। তাদের (সম্পাদক পরিষদ) অংশ গ্রহণ যাতে নিশ্চিত করা হয় সেই ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সম্পাদক পরিষদকে ওই বৈঠকে একটি লিখিত প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছি। আশা করি, তাদের এই প্রস্তাব সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আমলে নিয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করবে।’
আনিসুল হক আরো বলেন, ‘আমি এও বলতে পারি, সবার আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে যে আইনটি পাস হবে সেটি মত প্রকাশের অন্তরায় হবে না।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক ও সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল মাহফুজ আনাম বলেন, এই ছয়টি ধারা বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী। এই ছয়টি ধারা বহাল রেখে আইনটি পাস হলে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করবে। এ জন্য সম্পাদক পরিষদ এই ধারাগুলোর ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
‘বৈঠকে উপস্থিত তিন মন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন’, যোগ করেন মাহফুজ আনাম।
যে ধারাগুলোতে সম্পাদকদের আপত্তি
২১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা, প্রচারণা ও মদদ দিলে সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের কারাদণ্ড; জরিমানা ৫০ লাখ টাকা।
২৫ ধারায় আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ইচ্ছাকৃতভাবে বা অজ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য প্রেরণ করে যা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শকমূলক তালে তিনি অনধিক তিন বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক তিন লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কিছু ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করে, তাহলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা। জরিমানা ২০ লাখ টাকা।
৩১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, তাহলে তা ডিজিটাল অপরাধ। এই অপরাধের জন্য সাত বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
৩২ ধারা, এতে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বিধিবদ্ধ সংস্থার ককোনো গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস বা কম্পিউটার নেটওয়ারর্কে ধারণ, প্রেরণ, সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে সেটা হবে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ।’
এ ছাড়া সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির, সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দীন।
গত ১৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এ খসড়া বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করে ক্ষতিসাধন করলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। কারো কম্পিউটার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।