এলএনজির প্রস্তাবিত দাম কার স্বার্থে, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের
লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের যে দাম প্রস্তাব করা হয়েছে তা অযৌক্তিক বলে মনে করছেন দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা গণশুনানির মাধ্যমে এই দাম চূড়ান্ত করার দাবি জানান।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত নাগরিক সভায় তাঁরা এসব কথা বলেন।
সভায় জানানো হয়, আগামী মে মাস থেকে প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি গ্রিডে যুক্ত করে সরবরাহ করা হবে মিশ্রিত গ্যাস। আর এরই মধ্যে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন এবং শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন খাতে গ্যাসের দাম সর্বনিম্ন শতকরা ৬৬ ভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৩৭২ ভাগ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। গ্যাসের এই প্রস্তাবিত দাম কোনো ধরনের শুনানি ছাড়া কার্যকর করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সভার বক্তারা।
সভায় স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘তিন টাকা ১৬ পয়সা, হয়ে গেল দশ টাকা। নয় টাকা ৬২ পয়সা ১৬ টাকা। ২ টাকা ৭১ পয়সা হয়ে গেলো ১২ টাকা ৮০ পয়সা। আপনারা চিন্তা করেন পারসেন্টেজের দিক থেকে। গণশুনানির মাধ্যমে। লেট দেম প্রুফ যে, হ্যাঁ, বাংলাদেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া দেশকে বাঁচানো যাবে না। যদি আমরা এই কাজগুলি না করতে পারি, তাহলে মূল্যবৃদ্ধি এবং চৌর্য্যবৃত্তি কম্পিটিশন দিয়ে চলবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম. এম আকাশ বলেন, ‘দাম সমন্বয়ের যেকোনো প্রস্তাব গ্রহণের আগে বারকে গিয়ে একটা শুনানি করতে হবে। বার্ককে বাদ দিয়ে সরকারি ঘোষণা দিয়ে কোনো দাম, আকস্মিকভাবে কোনো একটা ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থে, কোনো একটা ধনী লোকের স্বার্থে দাম বৃদ্ধি আমরা চাইব না।’
সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নয়টিসহ আশেপাশে অন্তত দশটি এলপিজি কারখানা গড়ে উঠেছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, এসব কারখানা সুন্দরবনের পরিবেশের জন্য রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই আগামী প্রজন্ম ও জনস্বার্থ বিবেচনায় রেখে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সভায় উপস্থিত বক্তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক সৈয়দ বদরুল ইমাম বলেন, ‘এটার কিছু ক্যামিকাল সেগুলা যদি আপনার উপচে পড়ে কোথাও, কখনো যদি এটাতে আগুন ধরে যায় বিস্ফোরণ এমনভাবে হয় যে সেখানে প্রচুরে ক্ষতিসাধন হবে। এলএমজি আনার একটা মোক্ষম উদ্দেশ্য হচ্ছে, এলএমজির সঙ্গে যারা ব্যবসা করবেন, তাঁরা রাতারাতি মিলিয়নিয়ার হয়ে যাবেন। এই ব্যবসাটা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।’
সভায় কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সরকার একটা ছোট্ট গোষ্ঠীর জন্যে, কোটি কোটি মানুষের জীবনের ওপরে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, এটাকে আমি মনে করি, শুধুমাত্র তাদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা, তা না। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। রাষ্ট্রে সম্পদ ন্যায্যমূল্যে পাওয়া এটা সাংবিধানিক অধিকার। সেই সাংবিধানিক অধিকারের জায়গায় সরকার অন্যায়ভাবে, অন্যায্যভাবে হস্তক্ষেপ করছে।’
এ ছাড়া পরিবহন ও আবাসিকসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহৃত এলপিজি গ্যাসের দামও গণশুনানির ভিত্তিতে নির্ধারণ এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ সংশ্লিষ্ট খাতে খরচের দাবি জানানো হয় সভায়।