ইমামের মাথা ন্যাড়া করে মুখে ফেললেন মল
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় মো. আবদুল গফ্ফার (৩০) নামের এক ইমামকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ও সঙ্গীরা। একই সঙ্গে শৌচাগার থেকে মল এনে গফফারের মুখে ঢেলে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার দক্ষিণ মির্জাগঞ্জ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ওই ইমামকে উদ্ধার করে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. রাসেল (২৮), তাঁর সঙ্গী মো. আনসার ও মো. জলিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে রাসেলসহ আটজনকে আসামি করে মির্জাগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন মো. গফ্ফারের বড় ভাই মো. আবদুর রাজ্জাক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আবদুল গফ্ফার বরগুনার বেতাগী উপজেলার মিয়ার হাট গ্রামের একটি মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অবসর সময়ে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে বিভিন্ন রোগীর চিকিৎসা করতেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আবদুল গফ্ফারকে ফোন করে একজন অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা (ঝাড়-ফুঁক) দেওয়ার কথা বলে দক্ষিণ মির্জাগঞ্জে নিয়ে আসেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ও তাঁর সঙ্গীরা। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেলে করে একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে আসে তারা। এরপর একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাসেল, আনসার, জলিল ও তাদের দলবল অমানবিক নির্যাতন চালান। তারা গফফারের মাথা ন্যাড়া করে দেন এবং শৌচাগার থেকে মল নিয়ে তাঁর মুখে ঢেলে দেন।
পরে পুলিশ গিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ইমাম গফ্ফারকে উদ্ধার করে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে আনসার ও জলিলকে গ্রেপ্তার করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবদুল গফ্ফার বলেন, ‘আমি মির্জাগঞ্জ দরবার শরিফে কিছুদিন চাকরি করেছি। তখন থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের সঙ্গে পরিচয়। আমার কাছে বিশ্বাস করে কিছু রোগী আসতেন ঝাড়-ফুঁক নেওয়ার জন্য। আমি আল্লাহর কালাম পড়ে পানি পড়া দিলে ভালো হয়েছে অনেকে। তবে আমি কখনও মানুষের ক্ষতি করিনি। আমাকে নির্যাতনের সময় ওরা বলেছে, আমি নাকি কুফরি কালাম দিয়ে মানুষের ক্ষতি করি যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মির্জাগঞ্জে চাকরি করার সুবাদে ওই ইমাম ভয়ভীতি দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। এমনকি আমার এক খালা ও খালাতো বোনের সঙ্গেও চিকিৎসার নামে প্রতারণা করেছেন এবং আপত্তিকর আবদারও করেছেন। তাই তাঁকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. মফেজ গাজী বলেন, ‘ইমাম আবদুল গফ্ফার বিভিন্ন রোগীদের পানি পড়া এবং ঝাড়-ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করতেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাসেলসহ কয়েকজন মিলে ইমাম আবদুল গফ্ফারকে আমার বাসার সামনে থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। কী কারণে নিয়েছে তা আমি জানতে পারিনি।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘রাসেল এক সময় মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি কোনো কমিটিতে নেই। তবে তিনি বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।’
মির্জাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মেহেদী হাসান ঘটনাটিকে অত্যন্ত অমানবিক বলে জানান। তিনজনকে গ্রেপ্তার করার কথা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।