মনোনয়ন প্রত্যাহার করে আ. লীগের প্রার্থীকে সমর্থন জাসদের
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা সোমবার সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ হবে। প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়বেন। প্রার্থীদের অনেকেই এরই মধ্যে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে সোমবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) মনোনীত রাশেদুল হাসান রানা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপদ প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দিয়েছেন।
এর আগে রোববার হাইকমান্ডের নির্দেশে মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমির এসএম সানাউল্লাহও তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তিনি বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন।
এতে মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রত্যাহারের পর সর্বশেষ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী মোট প্রার্থীর সংখ্যা হলো সাত। এ ছাড়া গত দুই দিনে ২৮৭ জন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মধ্যে ৩১ জন এবং ৮৭ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মধ্যে তিনজনসহ মোট ৩৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন।
এদিকে ২০ দলীয় জোটের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের এক সপ্তাহ আগে থেকে নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনীর মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে মেয়র পদে মোট দশজন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইকালে এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আফসার উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পরে নয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। কিন্তু গত দুই দিনে দুই প্রার্থী এসএম সানাউল্লাহ ও রাশেদুল হাসান রানা তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় এখন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সাতজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম, বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকার, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ফজলুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন, ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন, কমিউনিস্ট পার্টির গাজী রুহুল আমিন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ উদ্দিন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আরো জানান, গত দুই দিনে ২৮৭ জন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মধ্যে ৩১ জন এবং ৮৭জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মধ্যে তিনজনসহ মোট ৩৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ফলে সর্বশেষ হিসেবে এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৫৬ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৪ জনসহ মোট ৩৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
জাসদ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার
জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান জানান, জঙ্গি এবং স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে স্বাধীনতার সপক্ষের সব শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই স্বাধীনতা বিরোধীদের রুখতে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জাসদ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী রানা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে সোমবার বিকেলে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ১৪ দলের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগে জাসদের মেয়র প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের ছয়দানা এলাকার বাসায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সমর্থন দেন।
এ সময় জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শওকত রায়হান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মো. আনোয়ারুল হক, জাসদের গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক খান সোহেল, গাজীপুর সোসাইটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ ও অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মহিসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেনা মোতায়েনের দাবি বিএনপির
২০ দলীয় জোটের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সাত দিন আগে থেকে নির্বাচন এলাকায় টহলসহ প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সেনাবাহিনীর মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দৃশ্যমানভাবে নাম ও র্যাংক ব্যাচসহ ইউনিফর্ম পরে দায়িত্বপালন করার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে টঙ্গীর আরিচপুর এলাকায় বাসভবন চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হাসান উদ্দিন সরকার ওই দাবি জানিয়েছেন। এ সময় গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মাজহারুল আলম, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. সালাহউদ্দিন সরকার, জেলা হেফাজতে ইসলামীর যুগ্ম সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন, বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. শওকত হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সন্ত্রাস দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারসহ সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি নির্বাচনী প্রচারণা সভা, সমাবেশ ও উঠান বৈঠকে সরকারি দলসহ সব দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার অনুরোধ করেন। এলাকায় সাধারণ ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি এবং অবৈধ কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ করতে হবে। তিনি নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের নিজ থানা ও পোলিং অফিসারদের নিজ ওয়ার্ডে নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। তিনি সব গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল ও প্রার্থীর ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যম কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশাধিকার এবং নির্বিঘ্নে সংবাদ সংগ্রহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও ২০ দলীয় জোট মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. সালাহউদ্দিন সরকার, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দিন, মীর হালিমুজ্জামান ননী, মো. শওকত হোসেন সরকার, জেলা হেফজতের যুগ্ম সম্পাদক মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে গাজীপুর জেলা ও মহানগর জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (হেফাজতে ইসলামী) নেতাদের সঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় করেন হাসান উদ্দিন সরকার। এ সময় গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির মুফতি মাসুদুল করিম, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাহাঙ্গীর হোসেন কাসেমী, যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন, আবুল বাসেত কাসেমী, মুফতি শাহাদাত হোসেন, হাফেজ সোহেল মাহমুদ, মাওলানা আবুল হোসাইন প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হবে। এবার ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১। ৪২৫টি কেন্দ্রের ২৭৬১টি কক্ষে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এটি হবে দ্বিতীয় নির্বাচন।