যুদ্ধাপরাধের ৬৩ মামলার প্রতিবেদন, বিচার শেষ ৩৩ মামলায়
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ৬৩ মামলায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে ৩৩ মামলার বিচার শেষ হয়েছে। বিচার শেষ হওয়া ৩৩ মামলার মধ্যে ৩১টির রায় প্রদান করা হয়েছে। দুটি মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।
গত ২১ মার্চ উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের বিরুদ্ধে যেকোনো দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছে। এটি হবে ট্রাইব্যুনালের ৩২তম রায়।
অন্যদিকে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষক আকমল আলী তালুকদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৭ মার্চ মামলাটি যেকোনো দিন রায় ঘোষণার (সিএভি) জন্য রাখা হয়েছে। এটি হবে ট্রাইব্যুনালের ৩৩তম রায়। এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির সময় আসামিদের মধ্যে আকমল আলী তালুকদার (৭৩) হাজির ছিলেন। বাকি তিন আসামি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার আবদুন নূর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া, আনিছ মিয়া ও আবদুল মোছাব্বির মিয়া পলাতক।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল পৃথক মামলার রায় ঘোষণা করবে। প্রসিকিউটর সায়েদুল হক সুমন আজ মঙ্গলবার বাসসের সঙ্গে আলাপকালে শিগগিরই এ দুই মামলার রায় ঘোষণা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
গত ১৬ এপ্রিল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটি তদন্ত সংস্থার ৬৩তম প্রতিবেদন।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, রায় হওয়া ৩১ মামলার মধ্যে আপিলে সাতটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এ ছাড়া আরো তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিন মামলার আসামিরা হচ্ছেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ মো. কায়সার ও মাওলানা আবদুস সুবহান।
আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেছিল ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মো. কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলায় শান্তি কমিটির নেতা সুবহানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।
আইন অনুযায়ী সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত এই তিন আসামিই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করে।
এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতে সাতটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি রায়ের পর জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতেও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। আরো বেশ কটি মামলা আপিলে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।