সাবেক এনএসআই প্রধান কারাগারে
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
আজ বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের আদালত এই আদেশ দেন।
এ মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ মে দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ।
তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারার নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল সকালেই ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে যে গণহত্যা ঘটেছিল, পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে সেই ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আরো অনেক ঘটনার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি আমরা। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসে তদন্ত সংস্থায়। সেই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করা হয়।’
‘তদন্তকালে দেখা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হক বিভিন্নভাবে আমাদের সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় তদন্ত সংস্থার আবেদনের কারণে আমরা তাঁকে গ্রেপ্তারের আদেশ চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করি। আদালত ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন,’ যোগ করেন তুরিন আফরোজ।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘এ আসামি প্রভাবশালী ব্যক্তি। পাকিস্তান আর্মির একজন সাবেক সদস্য হিসেবে তাঁকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে।’
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫০০ থেকে ৬০০ নিরস্ত্র বাঙালি ও সাঁওতালকে মেশিনগান দিয়ে হত্যার সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান তুরিন আফরোজ।
তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, আসামি ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশনপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগ দেন। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন। পরে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন।
১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তাঁকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয়। এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআইর পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সালে তিনি পুনর্নিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।