সেই সময়ই তাঁর মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলায় এই মাসের মধ্যে তাঁকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী। তাঁকে বরখাস্ত না করলে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই বরখাস্ত করে দেবেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
আজ বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল মাঠে শহীদ মিনারের পাশে এক সমাবেশে কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে উদ্দেশ করে আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার লজ্জায় মাথানত হয়ে গেছে একজন মন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বিরোধী ছাত্রদের, ছাত্রীদের বলতে পারে রাজাকারের বাচ্চা। সেই সময়ই তাঁর মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। অথবা তাঁকে গলা টিপে মারা। যে মানুষটা রাজাকারের বাচ্চা বলে সংসদে দাঁড়িয়ে গালি দিতে পারে…তাঁকে এখনও আমার বোন (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বরখাস্ত করে নাই। আমি জানি না। এই মাস সময় তাঁকে দিলাম। যদি মতিয়া চৌধুরীকে বরখাস্ত না করেন, আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন শেখ হাসিনাকেই বরখাস্ত করে দেবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলার সময় গত ৯ এপ্রিল সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, ‘পরিষ্কার বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলছে, চলবে। এই রাজাকারের বাচ্চাদের অবশ্যই আমরা দেখে নিব।’ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন এবং ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাঙচুর প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, মতিয়া চৌধুরী সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে বাসভবনে হামলা চালিয়ে উপাচার্যের গায়ে হাত দেওয়া, ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালানো, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি জঘন্য অপরাধ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের নামে সাধারণ ছাত্রদের ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে গতকাল (৮ এপ্রিল) এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এরা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের উত্তরসূরি।’
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘মূল গাত্রদাহ মুক্তিযোদ্ধা কোটা। পৃথিবীর দেশে দেশে যারা স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রাখে তাদের সন্তানদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকে। এদের দাবি রাজাকারের সন্তানদের জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা সংকুচিত করা। পরিষ্কার বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি, মুক্তিযুদ্ধ চলছে- মুক্তিযুদ্ধ চলবে এবং রাজাকারের বংশধরদের অবশ্যই আমরা দেখে নেব। তবে ছাত্রদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রাগ নেই। কারণ ফেসবুকে যারা স্ট্যাটাস দিয়েছে এরা তো ছাত্র না, এরা মতলববাজ, স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট। এদের সম্পর্কে সামান্যতম শৈথিল্য আমরা দেখতে চাই না।’
২০টি সিটও পাবে না আওয়ামী লীগ
বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী আজ ময়মনসিংহের সমাবেশে আরো বলেন, ‘আমি বলতাছি আওয়ামী লীগ থাকবে না। ভোট হইলে আওয়ামী লীগ তো ২০টা সিটও পাবো (পাবে হবে) না। আর জোর কইরা নিলে, জোর কইরা ২০১৪ সালের মতো করলে ছয় মাস থাকবেন না, আপনারে আমি বইল্লা দিলাম, ময়মনসিংহ শহীদ মিনারের পাদদেশে। আপনি ভালোভাবে ভোট করেন, মানুষের ভোটে যদি আপনি জিতেন আমি সবার আগে যাইয়া সালাম দিব।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন দলে গণতন্ত্র নাই, দেশেও গণতন্ত্র নাই। আমরা গণতন্ত্র চাই, গণতান্ত্রিক রাজনীতি চাই। দেশের মালিক জনগণ। গামছা মার্কা নিয়া, গামছা মাজায় বেঁধে বাংলাদেশের জনগণকে আবার মালিক বানাতে চাই।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যেভাবে জেলখানায় নেওয়া হয়েছে সেটা অন্যায় কাজ হয়েছে। টাকাই চুরি হয় নাই অথচ সরকার বলছে তছরুপ হইছে। পদ্মা সেতুর সময় বিশ্ব ব্যাংক যেমন বলছিল টাকা চুরি হইছে খালেদা জিয়ার এ মামলাতেই অনেকটা ওই রকমই হইছে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ এম আবদুর রশিদের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য দেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার বীর প্রতিক, যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল সিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক দিলুয়ার হোসেন, ময়মনসিংহ মহানগর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি একেএম উজ্জ্বল খান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দলের নেতা-কর্মীদের বের করা একটি আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।