‘কোটা লক্ষ্য অর্জনের জন্য, চিরন্তন ব্যবস্থা নয়’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্যই কোটা ব্যবস্থা প্রয়োজন। প্রয়োজন অনুযায়ী তা পরিবর্তনও করা উচিত। এটা চিরন্তন কোনো ব্যবস্থা নয়।
আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘যুক্তি আলোয় দেখি’ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এসব কথা বলেন আকবর আলি খান। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
ড. আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে কোটা ব্যবস্থা আছে তা অত্যন্ত দুর্বল। কোটা হলো কোনো লক্ষ্য অর্জনের ব্যবস্থা মাত্র। কোটা কখনো চিরন্তন ব্যবস্থা হতে পারে না। প্রতিবন্ধীদের জন্য যে এক শতাংশ কোটা আছে, তাও বাধ্যতামূলক নয়। দেশে শতকরা ১০ জন লোক প্রতিবন্ধী। এই বিবেচনায় তাদের জন্য সরকারি চাকরির কোটা ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা উচিত। তবে প্রতিবন্ধীদের আরো শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে যাতে তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে।
বিতর্ক অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
‘টেকসই উন্নয়নে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ’ এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিজয়ী হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আকবর আলি খান বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের কোথায় কোথায় কাজে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে সরকারের তেমন কোনো বিশ্লেষণ ও গবেষণা নেই। প্রতিবন্ধীদের মধ্যেও অনেক সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। তারা বিভিন্ন কারণে মূলধারায় আসতে পারছে না। তবে প্রতিবন্ধীদেরও যদি শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা যায় তাহলে তারাও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়ে উঠবে। ফলে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও তারা নিয়োগের সুযোগ পাবে। তখন হয়তো আর কোটার কোনো প্রয়োজন থাকবে না। অতএব বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে তাদের মূলধারায় আনতে হবে এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য যে কোটা আছে তা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
ড. আকবর আলি খান আরো বলেন, ‘আগে মহিলারা পুলিশে বা প্রতিরক্ষা বিভাগে সুযোগ পেত না। কিন্তু বর্তমানে তারা এসব জায়গায় দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। নারীদের জন্য বর্তমানে ১০ শতাংশ কোটা রয়েছে। কিন্তু নারীরা এখন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। সে বিবেচনায় কোথায় কোন কোটা দরকার ১০ বছর পর পর তা বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্কার করা প্রয়োজন। যেসব দেশে স্থায়ী ভিত্তিতে কোটা ব্যবস্থা আছে, যেমন ভারত। সেখানেও সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, কোটা কোনো চিরন্তন ব্যবস্থা নয়। তাই আমাদেরও কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে বর্তমানে এক কোটির বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছে। এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৩৩ লাখ। টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে পিছিয়ে পড়া এই প্রতিবন্ধীদের জাতীয় উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানে বিশেষ ব্যবস্থা করা জরুরি। সিভিল সার্ভিসে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা ও নন ক্যাডার সার্ভিসে ৩ শতাংশ কোটার কথা উল্লেখ করা হলেও এগুলো মূলত সাব-কোটা। বিসিএস পরীক্ষায় প্রতিবার গড়ে দুই হাজার প্রার্থী ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ পেয়ে থাকে। কিন্তু দেখা গেছে, এ পর্যন্ত শুধু পাঁচ-ছয়জন দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী প্রার্থী ক্যাডার সার্ভিসে চাকরির সুযোগ পেয়েছেন। তাহলে প্রতিবন্ধীদের জন্য যে ১ শতাংশ কোটার কথা বলা হয় সেটা কোথায়? মূলত কোটা পদ্ধতিতে মেধায় ৪৫ শতাংশ এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫৫ শতাংশ নিয়োগের কথা উল্লেখপূর্বক এই কোটা থেকে প্রার্থী পাওয়া না গেলে প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ১ শতাংশ সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ আরো বলেন, সে কারণেই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে যেহেতু সর্বমহলে আলোচনা হচ্ছে তাই এখনই উপযুক্ত সময়, সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রতিবন্ধী ও নৃগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোটা সংস্কার বিষয়ে যে কমিটি গঠিত হচ্ছে সেই কমিটি যেন সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক ঝুমুর বারি, সাংবাদিক জাহিদ রহমান, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন ও মু. শাহ আলম চৌধুরী।
প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।