একজনের ভোট অন্যজন দেওয়ায় তদন্ত করবে ইসি
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (কেসিসি)ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়ে গেছে এমন অভিযোগ এনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চারজন নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। তাঁরা বলছেন,‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত না করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
সিটি নির্বাচনে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেননি ছোরাব শেখ নামে এক ভোটার। আজ সকাল সোয়া ১০টায় নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের শেরে বাংলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বের হয়ে ওই ভোটার এই অভিযোগ করেন গণমাধ্যমে।
ছোরাব শেখ ওই কেন্দ্রে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁকে জানান যে,‘তাঁর ভোট আগেই দেওয়া হয়ে গেছে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই যে ভোটারের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে আগে তদন্ত করে বের করতে হবে সে ওই কেন্দ্রের ভোটার কি না। যদি সে ওই কেন্দ্রের ভোটার হয়েই থাকে তবে কীভাবে তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গেল। কীভাবে কাস্ট হয়েছে সেসব তদন্ত না করে এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’
তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তো নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা নিশ্চিত হয়ে যাবে। পরে তদন্ত করে কী খুব একটা বেশি ফল পাওয়া যাবে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ওই ভোটার কাকে ভোট দিত সেটা কিন্তু আমরা কেউ নিশ্চিত নই। আর এ রকম দু-চার জন ভোটারের জন্য কখনো ফলাফল পরিবর্তন হয় না।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম এনটিভি অনলাইনকে বলেন,‘এই বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। গণমাধ্যমে যা দেখেছি ওইটুকুই। তবে আমরা তদন্ত করে দেখব।’
কয়েক স্থানে যেহেতু একজন ভোটারের ভোট অন্যজন দেওয়ার অভিযোগ আসছে সেহেতু এমন অনেক ভোট যে এভাবে দেওয়া হয়নি সেটা কীভাবে বলবেন-এমন প্রশ্নে কবিতা খানম বলেন, ‘এটা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল যাতে এ ধরনের কাজ না হয়। কোথাও যদি হয়ে থাকে তবে সেটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলতে হবে।’
আপনারা বলছেন নির্বাচন শুরু হওয়ার পরে এভাবে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু হয়েছে তো? এখন যদি আপনাদের কথা ঠিক হিসেবে ধরি। তাহলে কি রাতের আধারেই এসব ব্যালট পোপারে সিল মারা হয়েছে-এমন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন,‘রাতের আঁধারে এভাবে ভোট দেওয়ার তো সুযোগ নেই। কারণ খালি বাক্স সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেখিয়ে তারপর ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।’
তাহলে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বা তার সহযোগিতায় এভাবে ভোট দেওয়া হয়েছে-এমন প্রশ্নে তালুকদার বলেন, ‘দেখুন আপনি যতই প্যাচান না কেন তদন্ত না করে এসব বলা মুশকিল। এসব বিষয় নিয়ে আমরা কমিশন সভায় আলোচনা করব তার পরে ভেবে দেখা যাবে কী হয়েছে না হয়েছে।’
একই বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এভাবে ভোট দেওয়া তো সম্ভব না। আমি জানি না এগুলো কীভাবে হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা জানান দিতে হলেও এই বিষয়টি নিয়ে অন্তত তদন্ত করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।’
এর আগে সন্ধ্যার সময় নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। এনটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে তাঁকেও একই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে দেখেছে যে তার ভোটটি দেওয়া হয়ে গেছে-এমন প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন, ‘হতে পারে। তবে আমরা বিষয়টা নিয়ে তদন্ত করে দেখতে পারি। কোন কেন্দ্রে কে ভোট দিতে গেল। কীভাবে ভোটটি কালেকশন হয়ে গেল এটা তদন্ত করে দেখতে হবে।'