খুলনায় ভোটার উপস্থিতি ৩০ শতাংশেরও কম : রিজভী
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ৬৫ শতাংশ ছিল বলে নির্বাচন কমিশন জানালেও ‘বাস্তবে এই হার ৩০ শতাংশেরও কম’ ছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
গতকাল অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। ভোটে অনিয়মের অভিযোগে তিনটি কেন্দ্র স্থগিত ছাড়া বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোট সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলেও দাবি নির্বাচন কমিশনের।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে, ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ৬৫ শতাংশের ওপরে। কিন্তু মূলত সেখানে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৩০ শতাংশেরও কম। সন্ত্রাসীদের বাধা ও সন্ত্রাসী হামলার মুখে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের অধিকাংশকেই কেন্দ্র থেকে ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা নেই, সামর্থ্য নেই আর যোগ্যতাও নেই। ভোট ডাকাতি, ভোট সন্ত্রাস, জাল ভোট, ভোটকেন্দ্র দখল, অবৈধ অস্ত্রের আস্ফালনের ফলাফল বিএনপির পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা অবিলম্বে সিইসির পদত্যাগ দাবি করছি।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বেহায়াপনার শেষ নেই বলেও মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বেহায়াপনার একটা শেষ আছে, কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বেহায়াপনার শেষ নেই। নির্লজ্জের মতো কীভাবে বলে নির্বাচন চমৎকার হয়েছে। আর সারা দেশের মানুষ দেখেছে, কতটা চমৎকার হয়েছে কুসিক নির্বাচন।’
রিজভী বলেন, ‘ভোট ডাকাতি, ভোট-সন্ত্রাস ছাড়া আওয়ামী লীগের বিজয় নিশানে কখনো হাওয়া লাগে না। এরা সব সময় জোর করে ক্ষমতা দখল করতে পছন্দ করে। তাই মানুষের ভোটাধিকার হরণ করছে প্রতিটি নির্বাচনে। গতকাল অনেক ভোটারকে ভোটকেন্দ্র থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে এই বলে যে, আপনার ভোট তো অনেক আগেই দেওয়া হয়ে গেছে।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘গতকাল খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির দক্ষ যজ্ঞ জনগণ প্রত্যক্ষ করল। ভোট দিতে গিয়ে ধানের শীষের ভোটার ও সমর্থকরা যেভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, তা কোনো সুস্থ নির্বাচন পদ্ধতি হতে পারে না। গতকাল ভোটের দিন নৌকার প্রার্থীর লোকজনদের ছিল সীমাহীন আধিপত্য ও বেপরোয়া চলাফেরা। গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা লাইন ধরে বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়। অনেক কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসাররা আওয়ামী ঝটিকা বাহিনীকে একচেটিয়া ভোট কাস্টিং-এ সহায়তা করে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে কারাবন্দি করা বর্তমান সরকারের দীর্ঘদিনের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যানের অংশ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখে রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর দীর্ঘদিনের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করছেন শেখ হাসিনা। তাঁকে নিয়ে বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য অশুভ, অমানবিক ও ব্যক্তি মানবাধিকারের চরম অবজ্ঞা। মূলত খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দিতে অগ্রাহ্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, তিনি সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার শিকার। চিকিৎসা প্রদানে সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবহেলায় খালেদা জিয়ার ক্ষতি হলে কোনোভাবেই রেহাই পাবেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন প্রমুখ।