‘বেনিফিট নিবেন দায় নিবেন না, তা হবে না’
রাজধানীর স্বজন পরিবহনের মালিকের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘বেনিফিট (লাভ) নিবেন- দায় নিবেন না, তা হবে না।’
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে রাজীবের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ মামলার শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেন আদালত।
সকালে শুনানির সময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ আদালতকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমরা ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী না। স্বজন পরিবহনের ওই গাড়িটি ওই দিন বাম দিক থেকে ওভারটেক করে এসে বিআরটিসির গাড়িটিকে ধাক্কা দেয়। এতে আমাদের দোষের কিছু নেই,আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ জন্য আমরা দায়ী না হলে ক্ষতিপূরণের টাকা কেন দেব?’
জবাবে স্বজন পরিবহনের পক্ষের আইনজীবী পংকজ কুমার কুণ্ড আদালতকে বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনায় স্বজন পরিবহন নামে যে গাড়িটি ছিল, সেটি স্বজন পরিবহন কোম্পানির গাড়ি না। ওই গাড়িটি এ কোম্পানিকে মাসে ছয় হাজার টাকা দিত। এ কারণে গাড়িটি স্বজন নামে দিয়ে চলত। আসাদুজ্জামান রাজু নামের একজন ওই গাড়ির মালিক।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি স্বজন পরিবহনের বাস মালিকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘বেনিফিট নিবেন, দুর্ঘটনায় জরিমানা দিবেন না তা হবে না।’
এ সময় রাজীবের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমি আদালতে বলেছি, রাজীবের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করা যাবে না। প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হোক। হাইকোর্টের আদেশের পর রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলাচলের চেষ্টা করছে।’ পরে শুনানি শেষে আদেশের জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে গত রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আবেদনটি স্থগিত না করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আদালতে বিআরটিসির পক্ষে ছিলেন এ বি এম বায়েজীদ। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনীরুজ্জামান।
এর আগে ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেন। এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এক মাসের মধ্যে দিতে বলা হয় দুই বাসের কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বিআরটিসি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১০ মে আপিল আবেদন করে।
গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন। ওই সময় তাঁর ডান হাতটি বাসের সামান্য বাইরে ছিল। ওই সময় হঠাৎই পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসের গা ঘেঁষে ওভারটেক করার সময় রাজীবের ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পথচারীদের সহায়তায় তাঁকে দ্রুত শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাজীব মারা যান।
এ ঘটনায় দুই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাঁরা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।