প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে গিয়ে শাশুড়িকেও খুন!
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর গ্রামে লন্ডন প্রবাসীর মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগমকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিতে আসামিরা জানান, প্রবাসীর সুন্দরী স্ত্রী রুমী বেগমকে ধর্ষণ করতে গিয়ে এই হত্যার ঘটনা ঘটে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সম্পা জাহানের আদালতে এই স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার আমতৈল গ্রামের বাসিন্দা তালেব হোসেন (২৪) ও বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের জাকারিয়া চৌধুরী শুভ (২০)।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিধান ত্রিপুরা জানান, সুন্দরী গৃহবধূ রুমীকে ধর্ষণ করাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। রুমী বেগমের স্বামী লন্ডনে থাকেন। আড়াই বছর আগে আখলাক চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বাড়িতে রুমী বেগম ও তাঁর শাশুড়ি মালা বেগম থাকতেন। তাঁদের বাড়ির গেট সবসময় তালা দিয়ে রাখা হতো। সেখানে কোনো সীমানা প্রাচীর ছিল না এবং পাশে কোনো প্রতিবেশীও বসবাস করতেন না।
যেভাবে হত্যা করা হলো
বিধান ত্রিপুরা জানান, কয়েকদিন আগে লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরী তাঁর এক বন্ধু রিপনকে তাঁর স্ত্রী রুমী বেগমকে একটি মোবাইলের কাভার কিনে দিতে বলেন। রিপন ব্যস্ত থাকায় গত ১১ মে তাঁর ভাই জয়কে দিয়ে এই কাভার রুমী বেগমের বাড়িতে পাঠান রিপন। জয় মোবাইল কাভার নিয়ে যাওয়ার সময় ওই এলাকার জাকারিয়া শুভ নামের এক বখাটের সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন জয়ের সঙ্গে বখাটে শুভও রুমীদের বাড়িতে যান। জয় মোবাইল ফোনের কাভারটি রুমী বেগমকে দিলে সেটি তাঁর পছন্দ না হওয়ায় ফেরত দেন। এ সময় শুভ রুমীকে দেখে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন।
শুভ জানতে পারেন, ওই বাড়িতে অপরিচিত কেউ গেলে গেট খুলে দেওয়া হয় না। পাশের বাড়ির ফারুক চৌধুরীর কর্মরত শ্রমিক তালেব মিয়া মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে গিয়ে কাজ করেন। গত শনিবার শুভ তালেব মিয়ার সঙ্গে দেখা করে তাঁকে একটি দোকানে আপ্যায়ন করান। এরপর শুভ তাঁকে মোবাইল ফোনে থাকা পর্নোগ্রাফি দেখান। এরপর তাঁরা পরিকল্পনা করেন, রোববার (১৩ মে) রাতে গিয়ে রুমীকে ধর্ষণ করবেন।
এরপর পরিকল্পনা মতো রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ওই বাড়িতে গিয়ে প্রথমে তালেব মিয়া প্রবাসীর মা মালা বেগমকে দাদি সম্বোধন করে ডাক দেন এবং গেট খুলতে বলেন। গেট খোলার পর তালেব মিয়ার সঙ্গে শুভও ভেতরে যান। তখন মালা বেগম ওই ছেলের পরিচয় জানতে চাইলে শুভ মালাকে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। এ সময় মালা দৌড়ে ঘরে যান। এরপর তারাও ঘড়ে গিয়ে ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলে ছুরি দিয়ে বার বার আঘাত করতে থাকেন। তাঁর চিৎকার শুনে পাশে থাকা রুমীও চিৎকার শুরু করেন। এ সময় রুমীকেও ছুরি দিয়ে আঘাত করেন শুভ। রুমী দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলে তালেব মিয়াও তাঁকে আঘাত করেন। ঘটনার সময় ওই বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বাড়িতে মিটিং ছিল। সেখান থেকে লোকজন চিৎকার শুনে এসে মৃতদেহ দুটি দেখতে পান।
বিধান ত্রিপুরা আরো জানান, তালেব হোসেন প্রবাসীর স্ত্রী রুমীর গ্রামের বাড়ির লোক হওয়ায় সহজেই তাঁদের বাড়িতে আসা-যাওয়ার সুযোগ নেয়। অপরদিকে জাকারিয়া চৌধুরী শুভ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। এলাকায় একজন বাখাটে হিসেবে পরিচিত। শুভ তাঁর নানার বাড়িতে বসবাস করত। তাঁর বাবা আরেকটি বিয়ে করে। এরপর ছোটবেলায় শুভকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁর বাবা। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা এবং অবাধ পর্নোগ্রাফি সমাজে অপরাধ সৃষ্টি করে।
এত বড় ঘটনার পর তালেব মিয়া এবং শুভ তাঁদের ব্যবহার করা ছুরি ও রক্তমাখা কাপড় ধুয়ে স্বাভাবিকভাবে এলাকায় চলাফেরা করে।
পুলিশ এই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (১৭ মে) সকালে রক্তমাখা কাপড় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা ছুরি বের করে। এই ঘটনায় শুভর আরেক বন্ধু ধর্ষণে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তাঁকেও খুঁজছে পুলিশ। তারপর দ্রুত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিলের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হবে।
গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুর্বৃত্তদের হাতে নিজ বসতঘরে খুন হন শাশুড়ি-গৃহবধূ।
সোমবার রাতে নিহত রুমি বেগমের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) হাবিবুর রহমানকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।