যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারের মৃত্যু
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাহিদুর রহমান (৮৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাহিদুরের মৃত্যু হয়। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের বাসিন্দা।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার হালিমা খাতুন জানান, বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত মাহিদুর রহমান গত ২৮ এপ্রিল থেকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অপহরণ, হত্যা ও নির্যাতনের তিনটি দায়ে ২০১৫ সালের ২০ মে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার সঙ্গে আফসার হোসেন টুটুকেও আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত। আসামিদের উপস্থিতিতে ওই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৩৩ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়, মাহিদুর ও আফসার একাত্তরে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে তারা শিবগঞ্জ এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান।
রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশনের আনা তিনটি অভিযোগের মধ্যে প্রথমটিতে দুই আসামিকে সর্বসম্মতভাবে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন তিন বিচারক। দ্বিতীয় অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের জেল। এর আগে দালাল আইনে তারা দণ্ডিত হওয়ায় তৃতীয় অভিযোগ থেকে ট্রাইব্যুনাল তাদের অব্যাহতি দেয়। এ ছাড়া এই অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুল মাঠ ও আশপাশের এলাকায় গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন টুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে মামলা দায়ের করেন শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধু। পরে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষিজীবী মাহিদুর স্থানীয় মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর মাহিদুর সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং স্থানীয় শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের দিনগুলোতে তিনি স্থানীয় রাজাকার ক্যাম্পেই থাকতেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আশপাশের এলাকায় হত্যা, লুটপাট, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। একই অভিযোগ আনা হয় আফসার হোসেন টুটুর বিরুদ্ধেও।
প্রসিকিউশনের তদন্ত দল এ দুই রাজাকার সদস্যের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। তদন্ত শেষে সাত খণ্ডে ৯৫৬ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই বছরই আফসার ও মাহিদুরকে পৃথকভাবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।