কবর পাকা করার অর্থ পেল মুক্তামনির পরিবার
মুক্তামনির জন্য দোয়া পড়াতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওর কবরটি পাকা করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খরচ দিয়েছেন সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ এস এম জগলুল হায়দার।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারপাশা গ্রামে মুক্তামনিদের বাড়িতে যান সাংসদ জগলুল হায়দার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বার্তাবাহক হিসেবে মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেনের হাতে তুলে দেন টাকা। এ সময় মুক্তার বাবা ইব্রাহিম ও মা আসমা বেগম কাঁদতে থাকেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে এবং দেশের সব মানুষের ভালোবাসার মায়া কাটিয়ে গতকাল বুধবার সকালে মুক্তামনি না ফেরার দেশে চলে যায়। রক্তনালিতে টিউমারের মতো বিরল রোগে আক্রান্ত ছিল মুক্তামনি।
সাংসদ জগলুল হায়দার বলেন, ‘আজ বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ ইউনিয়নের কামারপাশা গ্রামে মুক্তিমনির বাড়িতে যাই। তার পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং মুক্তামনির কবর জিয়ারত করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে নিজ অর্থায়নে মুক্তামনির কবরটি টাইলস দিয়ে পাকা করে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করি। দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য নগদ আর্থিক সাহায্য দেই। মুক্তামনির বাড়িতে আমার আসার সংবাদ পেয়ে এলাকার শত শত মানুষ এসে উপস্থিত হয় এবং মুক্তামনির কবর পাকা করে দেওয়ার সংবাদ শুনে সকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রাণখুলে দোয়া করেন।’
সাংসদ জগলুল হায়দার আরো বলেন, অসুস্থ মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে উন্নতমানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি নিজেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তা মনিকে দেখতে গিয়েছিলাম এবং আর্থিক সাহায্য দিয়েছিলাম।’
জন্মের দেড় বছর পর মুক্তামনির দেহে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও কোনো চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত হাতটি গাছের গুঁড়ির আকার ধারণ করে প্রচণ্ড ভারি হয়ে ওঠে। এক সময় এতে পচন ধরে, পোকাও জন্মায়। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকত মুক্তামনি। বিকট দুর্গন্ধের কারণে আত্মীয়স্বজন ও পড়শিদের যাতায়াতও এক রকম বন্ধ হয়ে যায়।
অনেক ডাক্তার ও হাসপাতালে মুক্তামনির চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো মুক্তার করুণ চিত্র তুলে ধরে। পরে সরকারি উদ্যোগে মুক্তামনিকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
চিকিৎসকরা বায়োপসি করে জানান, মুক্তামনির রক্তনালিতে টিউমার রয়েছে। পরে সিঙ্গাপুরে তার চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ভিডিও কনফারেনসের মাধ্যমে দেখার পর সিঙ্গাপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুক্তার চিকিৎসায় তাদের অস্বীকৃতির কথা জানিয়ে দেয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি সরকারি খরচে মুক্তামনির চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারপাশা গ্রামে আজ বৃহস্পতিবার মুক্তামনির পরিবারের পাশে সাংসদ জগলুল হায়দার। ছবি : সংগৃহীত
২০১৭ সালের ১০ জুলাই মুক্তামনিকে ভর্তি করার পর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম টানা ছয় মাস চিকিৎসা দেয়। এ সময় তার দেহে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসায় তার স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়।
ঢাকায় টানা ছয় মাস চিকিৎসা শেষে এক মাসের ছুটিতে মুক্তামনি ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর বাড়ি ফিরে আসে। এরপর থেকে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে রেখে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। এরই মধ্যে মুক্তামনির অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।