তালার ইউএনওকে প্রত্যাহারের দাবি
নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তালা- কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
ঘুষ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও নানা অনিয়মের কারণে তালার ইউএনও ফরিদ হোসেনকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে।
আজ শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, দুজন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ১২টি ইউপির চেয়ারম্যান। এ সময় তালা-কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ উপস্থিত থেকে তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দেন।
এ ছাড়া ফরিদ হোসেনের স্বেচ্ছাচারী আচরণের প্রতিবাদে আগামী ৩ জুন পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের যাবতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। এ ছাড়া পরের দিন ৪ জুন এক সমাবেশের মাধ্যমে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে যোগদানের পর থেকে নির্বাহী অফিসার ফরিদ হোসেন ঘুষ গ্রহণ ও নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদকে ভীতিকর জায়গায় পরিণত করেছেন।’
ফরিদ হোসেনকে একজন ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দিয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘গত ২৪ জুন মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় তিনি (ফরিদ হোসেন) কয়েকজন চেয়ারম্যানকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে উদ্ধত হন। এমন কি তাঁদের আটকে রেখে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন। নির্বাহী অফিসার আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই নিজের খেয়াল খুশিমতো যাবতীয় সিদ্ধান্ত পরিষদের ওপর চাপিয়ে দেন। বিভিন্ন প্রকল্প এবং ইজারাসহ নানা খাতে তাঁকে নির্ধারিত ঘুষ দিতেই হয়। তিনি বিনা কারণে সম্মানিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে অসদাচরণ করেন। এমনকি কথায় কথায় তেড়ে আসেন।’
এ সময় তালা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান ও ধানদিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফরিদ হোসেনের অসৌজন্যমূলক আচরণ এমনকি মারপিট করতে যাওয়ার বিষয়ও তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ইউএনও ফরিদ হোসেন তালা উপজেলার সাড়ে পাঁচ লাখ জনগোষ্ঠীর কাছে এখন এক আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে বসে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার কোনো পরিবেশ নেই বলেও উল্লেখ করেন চেয়ারম্যানরা।
এ সময় তালা উপজেলার ১২টি ইউপির চেয়ারম্যান ছাড়াও দুই ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইকতিয়ার হোসেন ও জেবুন্নেসা খানম এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও ফরিদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর জুন মাস আসতেই পরিষদের কয়েকজন সদস্য কিছু অনিয়মতান্ত্রিক কাজ আদায়ের জন্য এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে থাকেন। এবারও তাঁরা একইভাবে তাঁদের তদবির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসব কথা বলছেন। কোনো ধরনের ঘুষ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি করেন ফরিদ হোসেন।