নওগাঁয় যুবলীগ নেতা আজিম হত্যায় মামলা, ৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
খাসপুকুর দখল নিয়ে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় যুবলীগ নেতা আজিম উদ্দিন হত্যার ঘটনায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নিহতের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে রাণীনগর থানায় এ হত্যা মামলা করেন।
এ ঘটনায় প্রধান আসামি শাহাদত হোসেন সায়েমসহ স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নওগাঁ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিমন রায় মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে রাণীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহাদত হোসেন সায়েম। তাঁর সহযোগী হিসেবে আরো ২৫ জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা আরো কিছু আসামির কথা উল্লেখ রয়েছে মামলার এজাহারে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই রাণীনগর উপজেলার করজগ্রাম, খানপুকুর, আবাদপুকুর ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এলাকাজুড়ে।
নিহত আজিম উদ্দিনের জানাজা আজ সোমবার দুপুরে করজগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় যোগ দিতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম সেখান থেকে দ্রুত সরে গেলে পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে এখনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিমন রায় আরো জানান, ঘটনা তদন্তের পর জড়িত সবাইকে আসামি হিসেবে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান জানান, রোববার বেলা ৩টার দিকে আজিম উদ্দিন খুন হলে দ্রুত অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আবদুল আজিজ (৩৩), মাসুম আলী (৩৪), রাহিম উদ্দিন (৩২), আলম হোসেন (২৮) নামের চারজনকে আটক করা হয়।
সোমবার মামলা করার পর প্রধান আসামি শাহাদত হোসেন সায়েম (৪০), মিল্টন খন্দকার (৩৮) ও সোহেব খন্দকার (২৭) নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় সাতে। এঁরা সবাই স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। মামলার এজাহারে নাম থাকায় পরবর্তীতে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে জানান ওসি।
স্থানীয়রা জানায়, রাণীনগর উপজেলার করজগ্রাম গ্রামের একটি খাসপুকুর দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের মসজিদ কমিটি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিল। এ বছর সেটি উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহাদত হোসেন সায়েম লোহাচূড়া মৎস্য সমিতির মাধ্যমে ইজারা নেন। রোববার দুপুরের পর সায়েম লোকজন নিয়ে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ওই পুকুরের দখল নিতে যান।
এ সময় কালীগ্রাম ইউনিয়ন যুবলীগের সহসম্পাদক আজিম উদ্দিনসহ করজগ্রামের বেশকিছু বাসিন্দা তাদের বাধা দেয়। বাধা পেয়ে হামলা চালিয়ে আজিম উদ্দিন ও গ্রামবাসী কয়েকজনকে মারপিট করেন সায়েম ও তাঁর লোকজন। তাঁরা হাতুড়ি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কোপালে মারা যান আজিম উদ্দিন।
ঘটনার পর থেকে রাণীনগর উপজেলাজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।