‘মাইয়াডা মরি যাচ্ছে আর আমি জ্যামে বইয়া আছি’
‘মাইয়াডা মরি যাচ্ছে আর আমি জ্যামে বইয়া আছি! তিনডা ঘণ্টা এই বাসের ভিতরে। শ্যাষ দেহা দেখতে পারমু কি না জানি না। বুকটা আমার ছিড়া যাচ্ছে মাইয়ারে দেহার জন্যি!’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে যানজটে আটকে থাকা একটি বাসে বসে এসব বলছিলেন আর কাঁদছিলেন জরিনা বেগম। বয়স ৬৫ বছরের বেশি হবে। আবদুল্লাহপুর থেকে বাসে উঠেছিলেন। যাবেন শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে।
জরিনা জানালেন, তাঁর মেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। মেয়ের খারাপ অবস্থা শুনেই দুপুর ১২টার দিকে আবদুল্লাহপুর থেকে রওনা দেন তিনি। কারওয়ানবাজারে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে যখন জরিনা বেগমের কথা হয় তখন বাজে প্রায় চারটা! এমনই যানজট; বাস কোনোভাবেই নড়ছে না।
দিনভর রোজা রাখা বৃদ্ধা জরিনা বেগম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে থাকার কারণে একপর্যায়ে বাসেই কাঁদতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে মেয়ের জন্য আহাজারি করতে থাকেন জরিনা।
জরিনা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ ‘হুনলাম মাইয়াডার অবস্থা খুব খারাপ। মনে হয় বাঁচব না। আর আমি এই জ্যামেই আটকায়া আছি। জানি না আর কতক্ষণ লাগব পৌঁছাইতে। রোজা রাইখা আর পারতাছি না বাবা।’
এদিকে আগারগাঁওয়ে মিরপুর ১২ থেকে বাসে ওঠা শাকিল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার ক্লাস ছিল দুপুর ২টায়। এরমধ্যে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। অথচ আমি এখনো আগারগাঁও। আর যেতে ইচ্ছে করছে না ক্লাসে। এই পর্যন্ত আসতে এক ঘণ্টাও লাগার কথা না, অথচ সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা।’
আগারগাঁওয়ে বাসে ওঠা যাত্রী কবীর হোসেন যানজট সহ্য করতে না পেরে বাস থেকে নেমে যান খামারবাড়ির কাছে। তিনি বলেন, ‘রোজা থেকে এত জ্যাম সহ্য করা মুশকিল। না পেরে শেষমেশ হাঁটা শুরু করলাম। অযথা বসে থেকে লাভ নেই। দেখছেনই তো পুরো কারওয়ানবাজার পর্যন্ত বাস একেবারেই নড়ছে না!’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই বুধবার সকাল থেকে ছিল প্রচণ্ড যানজট। এই যানজট দুপুরের পর আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভয়ানক দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।