‘রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া-টেকনাফের ক্ষতিপূরণে কাজ করবে সরকার’
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে পরিবেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে সরকার কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
বুধবার দুপুরে বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে কোস্ট ট্রাস্ট ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের (সিসিএনএফ) আয়োজনে কক্সবাজার জেলা পরিষদ হলে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক মর্যাদা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিএসও-এনজিও ফোরামের কো-চেয়ার ও পালস কক্সবাজারের চেয়ারম্যান আবু মোরশেদ চৌধুরী।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘উখিয়া-টেকনাফে পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার কার্যক্রম গ্রহণ করবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য সবকিছু সরকার করবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে অতৃপ্তিবোধের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্য জিআরপিতে মোট বাজেটের এক চতুর্থাংশ রাখা হয়েছে। যে কোনো সংকট শুধু ক্ষতি সৃষ্টি করে না, অনেক সময় সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দেয়।’
মোহাম্মদ আবুল কালাম আরো বলেন, ‘বর্তমানে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বিশ্বে উদ্বাস্তু হওয়ার বিষয়টি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে এবং বর্তমানে ৬ কোটি ৮৫ লাখ লোক বিশ্বে উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাস করছেন। উখিয়া-টেকনাফে বাস্তুচ্যুতদের অবস্থানের ফলে জনসংখ্যা ও ভূমির ওপর, অবকাঠামোর ওপর একটা বড় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ওখানে একটা মানবিক সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সর্বপ্রথমে যখন সরকার বা এনজিওরা প্রস্তুত হয়নি, তখন স্থানীয় জনগণ নিজেদের যা আছে তা দিয়ে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করেছেন, প্রাণে বাঁচিয়েছেন। গত দশ মাস যাবত উদ্বাস্তুদের সহায়তা করতে সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় জনগণ, এনজিও, আইএনজিও, ইউএন এজেন্সিগুলো মিলে পরস্পরের সহযোগী হিসেবে যে কাজ করে যাচ্ছে সেই কার্যক্রমে আমি শুধু শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং সরকারি নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা যেন বজায় থাকে সেটাই দেখছি। আসল কাজ করছেন আপনারা।’
আবুল কালাম আরো বলেন, ‘উদ্বাস্তুদের অবশ্যই আমরা মানবিকতার দৃষ্টিতেই দেখব। কারণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত বছর উখিয়ায় এসে সে কথাই বলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতে যতদিন মিয়ানমারের উদ্বাস্তু নাগরিকরা নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত না যাচ্ছেন ততদিন মানবিক মর্যাদার সঙ্গেই আমরা তাদের সঙ্গে আচরণ করব।’
সিসিএনএফের সদস্য সচিব মকবুল আহমেদ সভার সূচনা বক্তৃতায় বলেন, ‘ইতিহাসের নানা পর্বে সামরিক জান্তা ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের নির্যাতনে জনগণ যেভাবে নির্যাতিত হয় এবং বাস্তুচ্যুত হয় তা নানা সময়ে নানাস্থানে ঘটে চলেছে। ১৯৭১ সালে এক কোটি বাঙালিকে শরণার্থী হতে হয়েছিল। ১৯৭১ সালে অনেক বাঙালিকেও আরাকানের রোহিঙ্গাদের বাড়িতে বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, তা যেন আমরা ভুলে না যাই।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউএনএইচসিআরের অপারেশন প্রধান এলিজাবেথ বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালন করে থাকে এবং যারা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জানাতে এগিয়ে এসেছেন তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। স্থানীয় জনগণ ও স্থানীয় সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের সর্বপ্রথম সহায়তাকারী, তাই তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। স্থানীয় জনগণের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ইউএন সংস্থাসমূহ এবং ইউএনএইচসিআর চেষ্টা করে যাচ্ছে। স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এরইমধ্যে বরাদ্দ করেছে। শিগগিরই তার কাজ শুরু হবে।’
সভাপতির ভাষণে আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ অনেক বছর পর বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তুলেছে। সিসিএনএফ গত বছর প্রথমে স্থানীয় পরিবেশের ও স্থানীয় জনগণের ক্ষতির বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করে।’
সিসিএনএফের কো-চেয়ার আবু মোর্শেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কোস্ট-ট্রস্টের পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য বদিউল আলমসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য দেন।
সভায় বলপূর্বক মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের ত্রাণ বিতরণসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ওপর আলোকপাত করা হয়।