কেউই আর বিয়ে করেননি এখন জোড়া লাগানো যায় কি না?
এবার ছয় বছরের শিশু ইমতিয়াজ আহমেদ বিশালকে আপাতত মায়ের কাছেই থাকার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত শিশুটির মা-বাবাকে উদ্দেশ করে বলেন, এই বয়সে একটি দুধের শিশুকে আদালতে আসতে হয়েছে আপনাদের কারণে। আপনারাই এই শিশুটির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছেন।
আদালত বলেন, যেহেতু দুজনের কেউই আর বিয়ে করেননি তাই নিজেদের সম্পর্ক আবার জোড়া লাগানো যায় কি না, তা ভেবে দেখুন।
সন্তানের অধিকার চেয়ে এক পিতার করা মামলায় আজ মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
আদালত বলেন, সব সংসারেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা, মান-অভিমান হতেই পারে। কিন্তু এই শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে আপনাদের সমঝোতা করা উচিত।
পরে আদালত শিশুটি কার হেফাজতে থাকবে সে বিষয়ে চলমান মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন। তবে এ সময়ে যখন খুশি তখন বাবা তাঁর শিশু সন্তানের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবেন বলে আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
শিশুটির বাবারপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাহিদ। মায়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ইসমাঈল আহমেদের ছেলে মোস্তফা আহমেদ রুবেলের সঙ্গে ২০১০ সালের ২৯ জুলাই বিয়ে হয় পল্লবীর মোহাম্মদ আলীর মেয়ে সুমাইয়া সুলতানার। ইসমাঈল আহমেদের মালিকানাধীন একটি স্কুলে শিক্ষকতা করার সুবাদে সুমাইয়া সুলতানার সঙ্গে মোস্তফা আহমেদ রুবেলের পরিচয়। সেখান থেকে ভালোবাসা। এরপর পারিবারিকভাবে বিয়ে। এই সংসারে ২০১২ সালের ৬ জুলাই জন্ম হয় বিশালের। কিন্তু গতবছর ২৬ সেপ্টেম্বর বিশালকে নিয়ে তার মা সুমাইয়া সুলতানা নানার বাড়ি পল্লবীতে চলে যান। এরপর তিনি আর স্বামীর বাড়িতে ফেরেননি।
মোস্তফা আহমেদ রুবেলের অভিযোগ, একপর্যায়ে সুমাইয়া তাঁকে তালাকানামা পাঠিয়ে দেন। এর পরও তিনি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কথা বলেছেন। নিজের ছেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ছেলেকে দেখতে দেননি তাঁরা। এ বিষয়ে তিনি ছেলের নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। পারিবারিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় ছেলেকে স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ির কাছ থেকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন রুবেল।
এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ২৯ মে এক আদেশে শিশু বিশালকে ২৬ জুন আদালতে হাজির করতে পল্লবী থানা পুলিশ এবং সুমাইয়া সুলতানাকে নির্দেশ দেন। সে আদেশে গতকাল সোমবার নির্ধারিত দিনে বিশালকে আদালতে হাজির করা হয়। এ কারণে গতকাল উভয় পরিবাবের সদস্যরা হাইকোর্টে উপস্থিত হন। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী শুনানি করলেও সুমাইয়ার পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় তিনি নিজেই আইনজীবী নিয়োগের জন্য সময় আবেদন করেন।
একপর্যায়ে আদালত মোস্তফা আহমেদ রুবেল ও সুমাইয়া সুলতানার বক্তব্য শোনেন আদালত। এর মধ্যেই রুবেল তার শিশু সন্তানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ছেলের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে আদালত কক্ষেই কাঁদতে থাকেন তিনি। রুবেল আদালতকে জানান, তিনি সুমাইয়ার সঙ্গে সংসার করতে রাজি আছেন। তবে সুমাইয়ার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত আগামী ১১ জুলাই পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন।
এ সময় আদালত শিশুটির মা-বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই বয়সে একটি দুধের শিশুকে আদালতে আসতে হয়েছে আপনাদের কারণে। আপনারাই এই শিশুটির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দিচ্ছেন।
আদালত বলেন, যেহেতু দুজনের কেউই আর বিয়ে করেননি তাই নিজেদের সম্পর্ক আবার জোড়া লাগানো যায় কি না, তা ভেবে দেখুন। আদালত বলেন, সব সংসারেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাট ঝামেলা, মান-অভিমান হতেই পারে। কিন্তু এই শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে আপনাদের সমঝোতা করা উচিত।