ইনজেকশনের পর ছটফট করছিল শিশুটি! তারপরই…
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফা খান নামে ওই শিশুটি মারা যায়।
নিহত রাইফার পরিবারের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে। ঘটনার পর সিভিল সার্জনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গলার ব্যাথার কারণে কিছু খাচ্ছিল না রাইফা। সে কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে ভর্তি করা হয় নগরীর মেহেদীবাগ ম্যাক্স হাসপাতালে।
শিশুটির বাবা সাংবাদিক রুবেল খান জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। জরুরি বিভাগে বসিয়ে রাখা হয় দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে রাইফাকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। দেখা যাচ্ছিল যে, যখনই ইনজেনশন দেওয়া হচ্ছিল তখনই শিশুটি ছটফট করতে শুরুর করে। পরে তিনি ইনজেকশনটি বদলে দিতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন।
তখন হাসপাতাল থেকে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. সুমন তালুকদারের পরামর্শ নেন। তিনি দুটি এক্স-রে পরীক্ষা দেন। সেই দুটিতে খারাপ কিছু ধরা পড়েনি বলেও দাবি করেন রুবেল খান। এর পর ডা. সুমন তালুকদার একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন।
এরপর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে অনকলে আনে রাইফার পরিবার। রুবেল খানের দাবি, কেবিনে এসে শিশুটিকে পরীক্ষা না করেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেওয়া প্রেসক্রিপশন দেখেই তিনি ওষুধ লেখেন। আগের ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে কেবল একটি ইনজেকশন যোগ করেন।
পরে গতকাল রাতে রাইফার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রচণ্ড খিঁচুনি ওঠে শিশুটির। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যায় রাইফা।
এ ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন রুবেল খান। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসায় মুত্যু হয়েছে এমনটি মানতে নারাজ।
ম্যাক্স হাসপাতালেল জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন প্রসাদ দাশ বলেন, শিশুটির জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তাকে আইসিইউতেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের শত চেষ্টাতেও বাঁচানো যায়নি রাইফাকে।
এদিকে ভুল চিকিৎসায় শিশু রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা সিভিল সার্জন। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাংবাদিক নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা।
এদিকে ঘটনার পর গত রাতেই অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক সুমন তালুকদার ও বিধান রায়সহ তিনজনকে আটক করে চকবাজার থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আজ শনিবার ভোরে চট্টগ্রামের বিএমএ নেতারা তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান।