শিশুর মৃত্যু : দুই চিকিৎসককে অব্যাহতি
চট্টগ্রামে আড়াই বছরের শিশু রাইফা খানের মৃত্যুতে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়ার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলার কথা জানানো হয়। পরে আজ শনিবার এ সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দায়িত্বে অবহেলার দায়ে অব্যাহতি পাওয়া চিকিৎসকরা হলেন, দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও শুভ্র দেব।
একই সঙ্গে শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান রায় চৌধুরীকে ওই হাসপাতালে আর না ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাইফার মৃত্যুতে প্রথমে ওই তদন্ত কমিটিই গঠন করা হয়। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের নানা অনিয়ম, ত্রুটি, ১৫০ শয্যার এ হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে ত্রুটি, হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীর কোনো নিয়োগপত্র না থাকা, প্যাথলজি বিভাগ ও চিকিৎসকের কোনো তথ্য নেই বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সভাপতি মুজিবুল হক এক বিবৃতিতে শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশিত অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিএমডিসির বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান।
গত ২৯ জুন দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে রাইফা খান মারা যায়।
নিহত রাইফার পরিবার অভিযোগ, চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গলার ব্যথার কারণে কিছু খাচ্ছিল না রাইফা। ওই কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে ভর্তি করা হয় ম্যাক্স হাসপাতালে।
শিশুটির বাবা সাংবাদিক রুবেল খান জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই নানা অব্যবস্থাপনা দেখতে পাচ্ছিলেন তাঁরা। জরুরি বিভাগে বসিয়ে রাখা হয় দুই ঘণ্টা। এর মধ্যে রাইফাকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। দেখা যাচ্ছিল যে, যখনই ইনজেনশন দেওয়া হচ্ছিল তখনই শিশুটি ছটফট করতে শুরু করে। পরে তিনি ইনজেকশনটি বদলে দিতে হাসপাতালটির চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন।
তখন হাসপাতাল থেকে একজন নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডা. সুমন তালুকদারের পরামর্শ নেন। তিনি দুটি এক্স-রে পরীক্ষা দেন। সেই দুটিতে খারাপ কিছু ধরা পড়েনি বলেও দাবি করেন রুবেল খান। এর পর ডা. সুমন তালুকদার একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলেন।
এরপর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরীকে ‘অনকলে’ আনে রাইফার পরিবার। রুবেল খানের দাবি, কেবিনে এসে শিশুটিকে পরীক্ষা না করেই কর্তব্যরত চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র দেখেই তিনি ওষুধ লেখেন। আগের ব্যবস্থাপত্রের সঙ্গে কেবল একটি ইনজেকশন যোগ করেন।
রাতে রাইফার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে প্রচণ্ড খিঁচুনি ওঠে শিশুটির। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যায় রাইফা।
এ ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন রুবেল খান। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে এমনটি মানতে নারাজ।
ম্যাক্স হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক রঞ্জন প্রসাদ দাশ বলেন, ‘শিশুটির জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তাকে আইসিইউতেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের শত চেষ্টাতেও বাঁচানো যায়নি রাইফাকে।’