ভৈরবে ইউপি সদস্যদের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ায় অনাস্থা!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কিছু দুর্নীতিবাজ সদস্যের দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই ইউপির চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অব.) আবু তাহের মিয়া। আজ মঙ্গলবার বিকেল স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি এই দাবি করেন।
আবু তাহের জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম মিয়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জাহের মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আক্তার হোসেনের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি আপত্তি তোলায়, এই চক্রটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। যার ফলে তাঁর বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ।
আবু তাহেরের দাবি, ২০১৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ১২টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছেন তাঁর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে স্থানীয় মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিরীক্ষাকালে তাঁর পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে স্বচ্ছতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। তাঁর এসব সুনাম পরিষদের কিছু সদস্য প্রথম দিক থেকেই বাঁকা চোখে দেখে আসছিলেন।
গতকাল সোমবার শ্রীনগর ইউপির ১০ সদস্য স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থা প্রস্তাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে জমা দেন। যার অনুলিপি দেওয়া হয় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক, দুদকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে।
অনাস্থা প্রস্তাবে বলা হয়, উপজেলার ৭ নম্বর শ্রীনগর ইউপি চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অব.) আবু তাহের ইউপি সদস্যদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পরিষদ পরিচালনা করেন। তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে প্রতিবাদকারী সদস্যদের হুমকি-ধমকি দিয়ে দমিয়ে রাখার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকেন।
এ ছাড়া আবু তাহের মনগড়া মতো প্রকল্প ঠিক করে পছন্দের একজনকে সভাপতি দিয়ে নিজেই সরকারি অর্থ একের পর এক আত্মসাৎ করছেন। রাজস্ব আদায়ের নামে বিনা রশিদে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চেয়ারম্যান ও তাঁর অনুগত লোকজন। নাগরিকসেবা প্রদান নিয়েও টালবাহানার আশ্রয় নিচ্ছেন। এতে তাঁদের নির্বাচিত এলাকার নাগরিকরা তাঁদের প্রতি ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
এসব বিষয় নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নাজেহালসহ অশ্লীল গালাগাল ও হুমকির শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন অভিযোগকারী সদস্যরা। ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন সদস্যের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করা ১০ জন সদস্য হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম মিয়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাকির হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আলকাছ মিয়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জাহের মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আক্তার হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জাহের মিয়া জারু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবু কালাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মতিউর রহমান এবং ১, ২ ও ৩ সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের শাহানা বেগম।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এই অনাস্থা প্রস্তাব প্রসঙ্গে শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল বাশার জানান, আবু তাহের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতে করে একটি কুচক্রী মহল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
শ্রীনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আতাউর রহমান আঙ্গুর জানান, এলাকার স্থানীয় রাজনীতি দুভাগে বিভক্ত। তাই চেয়ারম্যানের বিপক্ষের লোকজন তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।